বছরের প্রথমদিনেই বিনামূল্যের বই বিতরণ: একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন
বছরের প্রথম দিনটিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া যায় এবং বিদ্যালয়ে পড়ালেখা শুরু করা যায়- এমন কথা কদিন আগেও বিশ্বাস করা কঠিন ছিল। বরং নানা কারণে বই ছাপা হচ্ছে না, ছাপা হলেও বিদ্যালয়ে বই পাঠাতে বিলম্ব হচ্ছে বা পাঠানো হলেও সব বিষয়ের না পাঠিয়ে মাত্র কয়েকটি বিষয়ের বই পাঠানো হয়েছে- সংবাদপত্রের পাতায় ছাপানো ইত্যাদি খবরগুলো ছিল আমাদের জন্য স্বাভাবিক। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ অবশ্য বেশ আগে থেকে ‘বছরের প্রথমদিনেই বই দেয়া হবে’ ধরনের কথাবার্তা বলছিলেন, কিন্তু মন্ত্রীরা তো কতো কথাই বলেন! কথার সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া খুব কঠিন, তবে শিক্ষামন্ত্রী এক্ষেত্রে যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মন্ত্রীর সঙ্গে যারা আরও যারা ছিলেন, তাঁরাও ধন্যবাদার্হ হবেন। তাছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিদ্যালয় খোলা রেখে দিবস-সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিবসটি পালন করার কিছুদিন আগে গৃহীত সিদ্ধান্তটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। আজকে বিভিন্নজনের মুখে শিক্ষার যে নিম্নমানের কথা উচ্চারিত হতে শোনা যায়, তার মূলে রয়েছে এসব নানাবিধ সমস্যা- যার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ হচ্ছে বিদ্যালয়ে কম কর্মঘণ্টা। শিশুদের সারাবছরে বিদ্যালয়ে যতোক্ষণ থাকার কথা, তার চেয়ে তারা অনেক কম সময় পায় বিদ্যালয়ে থাকার। নানা ধরনের লম্বা-ছোট ছুটিছাটা তো রয়েছেই, পাশাপাশি পড়ালেখাটা যে মুখ্যত বিদ্যালয়কেন্দ্রিক হওয়া উচিত- সেই সংস্কৃতিটাও এখানে তৈরি হয় নি এখনও। এ অবস্থায় বছরের প্রথমদিনই শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়টি অন্তত দুটি সমস্যার সমাধানের ইঙ্গিত দেয়।
অথচ পূর্ববর্তী বছরগুলোতেও এরকম ভাবা যায় নি। শিশুদের পাঠ্যবইপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের টালবাহানা ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, প্রকাশকদের মুনাফা করার প্রবণতা, বিদ্যালয় বন্ধ রাখার সংস্কৃতি ইত্যাদি নানা কিছু মিলে বছরের প্রথম বেশ কয়েকটি দিন কেটে যেত কোনো কাজ ছাড়াই। এবার যখন আগে থেকেই বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই বিতরণে ঘোষণা দেয়া হয়, তখন থেকেই সংশয় ছিল- আদৌ কি এটা করা সম্ভব হবে? বিশেষ করে গত বছরের শেষদিকে এনসিটিবির গুদামে আগুনে প্রচুর কাগজ পুড়ে যাওয়ার এই সংশয় আরও বেড়ে যায়। এই আগুন লাগার পেছনে কী কারণ ছিল, তা অবশ্য এখনও জানা যায় নি; কিন্তু কেউ যদি এটাকে দুর্ঘটনা মনে না করে একটা ভালো উদ্যোগকে নস্যাৎ করার জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট কারও চক্রান্ত মনে করে, তাহলে বোধহয় দোষ দেয়া যাবে না। আশার কথা, আগুনে বিরাট ক্ষতির পরও শিক্ষামন্ত্রীর মধ্যে যে দৃঢ়তা দেখা গিয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত কাজ করেছে যার ফলে এ উদ্যোগ সফলকাম হয়েছে।
নতুন ক্লাসে উঠে নতুন বই পাওয়া সবসময়ই আনন্দের। নতুন বইয়ের নতুন পাতার ঘ্রাণ, নতুন নতুন গল্প-কবিতা পড়া, বইয়ে মলাট লাগানো ও মলাটের ওপর নকশা করা ইত্যাদি কাজকর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন বছরের পড়ালেখাকে বরণ করে নেয়। সেটাকে এতোদিন কেন নানা অজুহাতে পিছিয়ে রাখা হতো, তা স্পষ্ট নয়। এবার যখন পুরনো সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে প্রথমদিন থেকেই এই কাজটা করা গেছে, সেটা যেন আর কখনও বন্ধ না হয়, সেদিকটির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে আগে থেকেই। পাশাপাশি এ বছরের পাঠ্যবইয়ের কাগজ ও ছাপা অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের বই সবসময় হওয়া উচিত উজ্জ্বল, বিভিন্ন রঙের, ভালো কাগজে ছাপা ও টেকসই। মূলত আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে এখনই সব শিক্ষার্থীকে দামি কাগজের বই সরবরাহ না করা গেলেও আস্তে আস্তে এটা করা যেতে পারে। আগের বছরগুলোতে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে পুরনো বই দেয়া হত। শিক্ষার্থীদের পুরনো বই দেয়া মানে পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহ কিছুটা হলেও কমিয়ে দেয়া। একই বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নতুন বই পাচ্ছে, আবার কিছু শিক্ষার্থী পাচ্ছে নতুন বই- এই দৃশ্য তাদের মধ্যে সহজেই বিরূপ প্রভাব ফেলে। এবার শিক্ষার্থীরা সেই প্রভাব থেকেও মুক্ত। অর্থাৎ সার্বিক অর্থে সব মিলিয়েই পুরো বিষয়টি ছিলো ইতিবাচক।
তবে সব শিক্ষার্থীই যে প্রথমদিন বই পেয়ে গেছে তা নয়। সংবাদপত্রের খবর অনুসারে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পরেও বই পায় নি। কোথাও কোথাও চাহিদার তুলনায় কম বই পাঠানোয় বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী বই পেয়েছে, কিছু পায় নি। আবার অনেক জায়গায় বইতে কারিগরি ত্রুটিও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। এছাড়া নানা জটিলতার কারণে কিন্ডারগার্টেনসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বই পায় নি। শিক্ষামন্ত্রী যদিও বলেছেন পাঠদান করার অনুমতি যেসব বিদ্যালয়ের রয়েছে তারা বিনামূল্যের বই পাবে, কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো কেন তা বোধগম্য নয়। যেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে বই পায় নি, তারা স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকবে। এ বছর প্রথমবারের মতো বছরের প্রথমদিন বই দেওয়া হচ্ছে বলে হয়তো কিছু সমস্যা হচ্ছে, তবে এবারকার অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে পরবর্তী বছরে যাতে এমনটি না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক থাকবেন বলে আশা করা যায়।
বই বিতরণের এই কাজটি কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে আরেকটু আগেও শুরু করা যেতে পারে। বর্তমানে নভেম্বরের মধ্যে বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর পর ডিসেম্বর মাসটি শিক্ষার্থীদের জন্য ছুটি। পড়ালেখার পাশাপাশি ছুটি উপভোগ করাটা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি কিন্তু এই লম্বা ছুটি কমিয়ে যদি ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহটিকে বই বিতরণের কাজে ব্যবহার যায়, তাহলে পরবর্তী বছরের একেবারে প্রথমদিন থেকেই শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। শিক্ষাকার্যক্রম বলতে শুধু যে পড়ালেখাকে বুঝানো হচ্ছে, তা কিন্তু নয়। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারি প্রথম দুটো সপ্তাহ শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ, বার্ষিক খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, সহশিক্ষাক্রমিক নানা ধরনের কার্যক্রম, শিক্ষাসফর ইত্যাদির কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সময়টাকে কাজে লাগানো যায়। এতে নানা ধরনের আনন্দজনক কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিক্ষার্থীরা বছরটা শেষ করার পাশাপাশি নতুন বছরটাও শুরু করতে পারবে ভালোভাবে। শিক্ষার্থীর কাছে যদি শুরু ও শেষটা আনন্দের হয়, তাহলে পড়ালেখার প্রতি তার আগ্রহ যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
সরকারের শিক্ষাসম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হচ্ছে সব পাঠ্যবইকে ওয়েব সাইটে উন্মুক্ত করে দেয়া। এনসিটিবির ওয়েব সাইটে (http://www.nctb.gov.bd/) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইগুলো এখন যে কেউ চাইলেই দেখতে বা প্রিন্ট নিয়ে পড়তে পারে। যদিও আমাদের দেশে খুব কম মানুষই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, কিন্তু এই সুবিধা উন্মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে অন্তত এক্ষেত্রে কিছুটা হলেও অগ্রগতি হলো। সারা দেশের গ্রাম পর্যায়ে ও বিদ্যালয়গুলোতে আস্তে আস্তে ইন্টারনেট সুবিধা ছড়িয়ে দেওয়ার কথা হচ্ছে- সেটা করা হলে তখন পাঠ্যবইয়ের জন্য বছরের প্রথম দিনটির জন্যও অনেকের অপেক্ষা করতে হবে না। তাছাড়া কারও বই কোনো কারণে ছিঁড়ে বা নষ্ট হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সুবিধা যখন উন্মুক্ত করা গেছে, তখন এর সুবিধাও ভোগ করা যাবে নানাভাবে। এখন সব পর্যায়ের মানুষ কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে পড়ালেখার সর্বোচ্চ সুবিধাটা পেতে পারে, সেই বিষয়গুলোর ওপর আস্তে আস্তে নজর দিতে হবে।
জাতীয় দিবসে বিদ্যালয় খোলা রাখা, প্রথমদিন বই দেয়া, পাঠ্যবই সবার জন্য উন্মুক্ত করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ড শিক্ষা সম্পর্কে সরকারের বিশেষ করে শিক্ষামন্ত্রীর আগ্রহ থেকে অন্তত এটুকু আশ্বস্ত হওয়া যায় যে, শিক্ষাসম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে এবং তিনি আন্তরিকভাবেই শিক্ষা নিয়ে কিছু একটা কাজ করতে চান। এই আগ্রহ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরীর মধ্যেও দেখা গেছে; অবশ্য তিনি শিক্ষা সেক্টরেরই একজন মানুষ। শিক্ষা নিয়ে ভাবিত এরকম দুজন মানুষকে পরপর পাওয়ায় সার্বিকভাবে দেশের শিক্ষা সেক্টর উপকৃত হয়েছে সন্দেহ নেই। কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে শুধু বসিয়ে দিলেই হয় না; যার যেদিকে আগ্রহ রয়েছে তাঁকে সেদিকে দায়িত্ব দিলে সার্বিক উন্নতি ঘটানো খুব একটা কঠিন কোনো ব্যাপার নয়।
১২ টি মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া এসেছে এ পর্যন্ত:
আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে নিচের মন্তব্য-ফর্ম ব্যবহার করুন, অথবা, লগ-ইন করা অবস্থায় মন্তব্য করুন:
* ভাষা: মন্তব্যের ভাষা হওয়া উচিত (মূলত) বাংলা — অবশ্যই বাংলা হরফে। আর ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়।
** মডারেশন: মন্তব্যের ক্ষেত্রে এখানে প্রাক-অনুমোদন মডারেশনের চর্চা নেই। তবে যে-সব কারণ উপস্থিত থাকলে প্রকাশিত মন্তব্য বিনা নোটিশে (এবং কোনো ধরণের কারণ-দর্শানো ছাড়াই) পুরোপুরি মুছে দেয়ার বা আংশিক সম্পাদনা করার অধিকার "মুক্তাঙ্গন" সংরক্ষণ করে, সেগুলো হলো: (ক) সাধু এবং চলিত রীতির সংমিশ্রণ; (খ) ত্রুটিপূর্ণ বানানের আধিক্য; (গ) ভাষার দুর্বল, আঞ্চলিক, অগ্রহণযোগ্য বা ছাপার অযোগ্য প্রয়োগ; (ঘ) ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রবণতা, ছিদ্রান্বেষণ ও কলহপ্রিয়তা; (ঙ) অপ্রাসঙ্গিকতা ও বক্তব্যহীনতা। এ ব্যাপারে মডারেশন টিমের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তাই, চূড়ান্তভাবে পেশ করার আগে "প্রাকবীক্ষণ"-এর মাধ্যমে নিজ-মন্তব্যের প্রকাশিতব্য রূপ যাচাই করে নিন।
==নিবন্ধিত লেখকদের প্রতি==
লেখকের নিজস্ব পাতার প্রকাশিত কাজের তালিকায় আপনার পেশ করা মন্তব্যের নির্ভুল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে 'লগ-ইন' করা অবস্থায় মন্তব্য করুন।
==প্রকাশিত বক্তব্যের/মতামতের দায়ভার==
পোস্ট কিংবা মন্তব্যে প্রকাশিত বক্তব্য কোন অবস্থাতেই মুক্তাঙ্গন ব্লগের নিজস্ব মতামতের বা অবস্থানের পরিচায়ক নয়। বক্তব্যের দায়ভার লেখক এবং মন্তব্যকারীর নিজের। শুধুমাত্র "মুক্তাঙ্গন" নামের আওতায় প্রকাশিত বক্তব্যই ব্লগের সামষ্টিক অবস্থানকে নির্দেশ করবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আজকের প্রথম আলোর প্রধান খবরটিই হচ্ছে, ৫০ লাখ বই এখনো ছাপা হয় নি। মূলত, দাম দিয়ে কেনার বইগুলোরই এই অবস্থা।
দুঃখজনক ব্যাপারটা। কী বলেন?
[মন্তব্য-লিন্ক]
দুঃখজনক তো বটেই, এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। তবে প্রথমবার বলে একটু ছাড় দেয়া যায়। আর প্রকাশকদের দৌরাত্ম্য যে কীরকম, সেটা নিশ্চয়ই ভালো করেই জানেন। তারা প্রতিটা পদে পদে বাধা সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে নোট ও গাইড বইয়ের বিরুদ্ধে আদালতের রায় যাওয়ায় তারা মহাখ্যাপা!
তবে সরকারের কাজ হবে এবারকার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী বছরগুলোতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকা।
[মন্তব্য-লিন্ক]
ভাবনাটুকু উস্কে দেওয়ায় গৌতমকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
সময় মতো বিদ্যালয়ে শিশু পাঠ্য-পুস্তক পৌঁছে দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি শুভ সংবাদ, সন্দেহ নেই। কিন্তু সময় মতো বই পৌঁছানোতেই যেনো উদ্যোগটুকু ফুরিয়ে না যায়। কারণ শিশু শিক্ষার যাত্রাটি হতে হবে অনেক দীর্ঘ।…
সরকারের ‘সবার জন্য শিক্ষা’ কর্মসূচির শীর্ষ একজন কর্মকর্তার (নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না) গবেষণা পত্রে দেখেছি, প্রাথমিকে ৪৫ শতাংশ শিশুই ঝরে পড়ে। এর কারণ হিসেবে তিনি জানাচ্ছেন — অভাব, শিক্ষকের রূঢ় ব্যবহার, শিশু শিক্ষায় আনন্দ খুঁজে না পাওয়া, দুর্গমতা ও ভাষা না বোঝা (আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে)।
একই গবেষণা সরকারি কর্তাটি জানাচ্ছেন, পাঁচ বছরের প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শিশুর আট বছর সময় লাগছে!
এই যখন কঠিন বাস্তবতা, সেখানে ২০১১ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ বোধহয় অধরা সোনার হরিণই থেকে যাচ্ছে! আর এই খাতে প্রতি বছর যে কোটি কোটি দেশি-বিদেশি টাকা ব্যয় হচ্ছে–তার অংক না আপাত না-ই কষা গেলো। …
[মন্তব্য-লিন্ক]
এটা কম বেশী সর্বত্রই প্রযোজ্য মনে হয়েছে। কি ভয়ংকর এই ৪৫% সংখ্যাটি! ছোটবেলায় স্কুলকে ভীতিকর একটা কিছু মনে করতো না, এমন মানুষ আমাদের মধ্যে খুব কমই আছে। খোদ রবীন্দ্রনাথ আইনস্টাইনও রেহাই পাননি এর থেকে। অবকাঠামোর সমস্যা তো আছেই, তার সাথে যুক্ত হয়েছে বাবা মা’র চাপ, যারা নিজেদের জীবনের আর দশটা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির সাথে মিলিয়ে ফেলেন সন্তানের ভবিষ্যত এবং অমূল্য শৈশবের বর্তমানকে। নিজের সন্তানের মাধ্যমে চান বিশ্ব জয় করতে!
[মন্তব্য-লিন্ক]
আপনি যতোটুকু বলেছেন, অবস্থা কিন্তু তার চেয়েও ভয়াবহ। এডুকেশন ওয়াচের সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে দেখা গেছে, প্রথম শ্রেণীতে যে কয়জন শিশু ভর্তি হয়, তাদের প্রায় ৭৭ শতাংশ তৃতীয় শ্রেণী পাশ করতে পারে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত উঠতে পারে প্রায় ৫৮ শতাংশ আর ৫০ শতাংশের একটু বেশি প্রাথমিক শিক্ষাস্তর সমাপ্ত করতে পারে। সুতরাং অর্ধেক শিক্ষার্থীই আসলে ঝরে যাচ্ছে। এই ঝরে যাওয়ার পেছনে যে কারণগুলো তিনি জানাচ্ছেন, সেগুলো অবশ্য ঠিক।
আর সবার জন্য শিক্ষা? আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূরকরণের অঙ্গীকার করেছে। স্বাভাবিক হিসেব-নিকেশের ক্ষমতা থাকলে তারা এটা করতো না। বেশ কিছুদিন আগেও সরকারপক্ষ থেকে দেশে সাক্ষরতার হার বলা হতো ৬৫ শতাংশ। কিছুদিন আগেই সরকারি বিবিএসের জরিপ থেকে দেখা গেলো এই হার মাত্র ৪৮ শতাংশ। সুতরাং সরকার যদি একশগুণ উদ্যম নিয়েও ঝাঁপিয়ে পড়ে, তাহলেও ২০১৪ সালের মধ্যে ১০০ ভাগ সাক্ষরতা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
[মন্তব্য-লিন্ক]
প্রতিবার শিক্ষা নিয়ে তোমার লেখাগুলো পড়ার পরেই ভাবি এখানকার স্কুলের সিস্টেম নিয়ে কিছু লিখবো। তারপর কেনো যেনো আর হয় না।
তুমি যেমন লিখলে, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বই দিয়ে দেয়া যেতে পারে। এটা কিন্তু এখানেও আছে। ছুটির শেষে ক্লাশ শুরু হওয়ার আগে এক সন্ধ্যায় বাবা মায়ের সাথে যেয়ে বই আনতে হয়। এখানে অফিসের মতো স্কুলেরও আওয়ার দেয়া থাকে। বয়স অনুযায়ী বাচ্চাদের স্কুল আওয়ার ডিফরেন্ট হয়। অমুক বয়সের বাচ্চাদের এতো আওয়ার ইয়ারলী স্কুলে পড়তেই হবে। স্কুলের রোজকার খেলা ধূলা, ব্যয়াম অন্যান্য কার্যকলাপগুলো পড়ার আওয়ার থেকে আলাদা। সেজন্য বই দেয়া কিংবা গান বাজনার ক্লাশের সময়টুকু পড়ার সময়টুকু থেকে আলাদা করে দেয়া হয়।
ভুল ত্রুটি থাকলেও সদিচ্ছা যে প্রকাশ পেয়েছে এতেই আনন্দিত।
ধন্যবাদ তোমাকে চমৎকার লেখাটির জন্যে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আপনি যদি ওখানকার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার বিভিন্ন দিকের ওপর (যেমন- শিক্ষাদান পদ্ধতি, ক্লাসরুম ম্যানেজমেন্ট, শিক্ষক-শিক্ষার্থী মিথস্ক্রিয়া, পাঠ্যবই, শিক্ষাক্রম ইত্যাদি) একটা সিরিজ লেখা দেন, তাহলে অনেকে উপকৃত হবেন। নানা কারণে অন্য দেশের শিক্ষাব্যবস্থাগুলোর সাথে নিজ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে মেলানো দরকার।
সুতরাং লেখার দাবি থাকলো। 🙂
[মন্তব্য-লিন্ক]
এদিকে দৈনিক কালের কণ্ঠ জানাচ্ছে:
পড়ুন: এখনো প্রতীক্ষায় শিশুরা, প্রাথমিকের কিছু বই বাঁধাই বাকি
[মন্তব্য-লিন্ক]
হুম, এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এবারকার ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার আগামীবছর এই অব্যবস্থাপনাগুলো ঠিক করতে পারবে- এটুকু অন্তত আশা করতে চাই। তবে সরকারের এই উদ্যোগটা প্রশংসনীয়।
[মন্তব্য-লিন্ক]
এই পোস্টখানার লেখক গৌতমকে অনেক ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি চমৎকার লেখনির মাধ্যমে আমাদের পাঠকদের সামনে বিষয়টি সুন্দরভাবে উপস্হাপনের জন্যে…সরকারের এই ব্যাপারটি আসলেই খুব উৎসাহব্যান্জ্ঞক ছিলো…সামান্য যে ভুলগুলো ছিলো তা সামনে ঠিক হয়ে যাবে আশা করা যায়…আর আমাদের শিক্ষামন্ত্রীকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানানো উচিত এই অসাধ্য সাধনটি সূচারুপে সম্পন্ন করার জন্যে…
[মন্তব্য-লিন্ক]
পাঠ্যবই এবার ইন্টারনেট!!! পড়ুন এখানে…
[মন্তব্য-লিন্ক]
উৎসাহমূলক মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিশেষ করে লিংকটার জন্য।