গড়ে প্রতি বছর ৫০০ কিলোমিটার মরে গেছে
পা বাড়ালেই নদী! এভাবেই বাংলাদেশকে ভাবতে ভালো লাগত। নদীমাতৃক বলতে ভালো লাগত না। কেন জানি এ বিশেষণটা আমার পছন্দ নয়। কিন্তু গত ৩৭ বছরে আমরা হারিয়েছি ১৮ হাজার কিলোমিটার নদী। ১৯৭১ সালে আমাদের ছিল ২৪ হাজার কিলোমিটার নদী। তার মানে এখন আমাদের নদী মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু এ হিসাব বর্ষা মৌসুমের, শুকনো মৌসুমে আমাদের নদী মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কিলোমিটার। গড়ে প্রতি বছর ৫০০ কিলোমিটার ধরলে এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ নদীহীন হবে।
যে নদীরা মরে গেছে
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা, রাজবাড়ী-ফরিদপুরের ভুবনেশ্বর, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ও তার শাখা বরাক, শরীয়তপুরের পালং, কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুড়ি, যশোরের হরিহর ও মুক্তকেশরী, খুলনার হামকুড়া, সাতক্ষীরার মরিচাপ, লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালীর বামনী, বগুড়ার মানস, নাটোর-পাবনার বড়াল ও চিকনি, রাজশাহী-নাটোরের মুসাখান, কুষ্টিয়া-মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা-যশোর-ঝিনাইদহ-খুলনা-বাগেরহাটের ভৈরব, দিনাজপুরের মাহিলা, তিরাই, বেলান, ভেলামা, ঢিবির, সোয়া, গর্ভেশ্বরী।
যে নদীরা মরে যাচ্ছে
পঞ্চগড়-নীলফামারী-রংপুর-বগুড়া-সিরাজগঞ্জের করতোয়া, পাবনা-মানিকগঞ্জ-ঢাকা-মুন্সীগঞ্জের ইছামতি, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-মাগুরা-নড়াইল-পিরোজপুরের কালীগঙ্গা, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-মাগুরা-ফরিদপুর-মাদারীপুরের কুমার, নড়াইল-চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহের চিত্রা, যশোর-খুলনার ভদ্রা, নেত্রকোনার সোমেশ্বরী। দিনাজপুরের কাঁকড়া, পাতরাজ, তুলসীগঙ্গা, ইছামতী, টাঙ্গন।
এছাড়া আরো আছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কপোতাক্ষ, মাথাভাঙ্গা, বেতনা, বেগবতী, শ্রীহরি, আপার ভদ্রা, ভবদহ, বেত্রবতী, টেকাসই।
পানির প্রবাহ কমে গিয়ে চরের উপদ্রবে বিপর্যস্ত
কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেটসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, সুরমা, আড়িয়াল খাঁ, মগড়া, ধলাই, আত্রাইখালী, কংস, ধনু, চিনাই, ঘোড়াউত্রা, বালই, সাপমরা, গোলামখালী, কানাই, বেতাই, কাহিলহর, বিষনাই, খোয়াই, করাঙ্গী, সুতাং, বেড়ামোহনা, সুনাই, কুশিয়ারা, শুটকি, বিজনা, রত্না, কালনীসুতা, সিংগুয়া, ফুলেশ্বরী।
নীলফামারী-রংপুর-কুড়িগ্রাম-দিনাজপুর-সিরাজগঞ্জ-পাবনা-বগুড়া-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও-গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, যমুনেশ্বরী, বুড়ি, ধুম, চরালকাটা, চিকলা, বুড়িখোরা, কুমলাই, নাউতারা, আত্রাই, ইছামতি, পুর্নভবা, বুড়িতিস্তা, চিকলি, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, ঘাঘট, যমুনা, ফুলকুমার, বড়াল হুরাসাগর, গুমানী, দইভাঙ্গা, কাগেশ্বরী, চন্দনা, মহানন্দা, ভৈরব, মাথাভাঙ্গা, গড়াই, আড়িয়াল খাঁ, পাগলা, পদ্মা, বারনই, করতোয়া, বেরং, গোবরা, ডাহুক, পাতরাজ, ভেরসা, ঘোড়াতিস্তা, চাওয়াই, তালমা, টাঙ্গন, হাতুড়ি, তুলাই, ঘোড়ামারা, ছোট যমুনা, তিরনই, নগর, কুলিক, তিসা, শুক।
বাংলাদেশের নদীগুলো প্রতিবছর ৩০০ বিলিয়ন টন পলি বহন করে। বাংলাদেশে কত ভূমিদস্যু ও ভূমিচোর তার একটা জরিপ হলে এখনই বলে দেয়া যাবে ভবিষ্যতে ঠিক কারা কারা বাংলাদেশ শাসন করবে।
আর একটা অনুরোধ কেউ যদি ৩০০ বিলিয়নটাকে মন্তব্য আকারে সংখ্যায় লিখে দিতে পারতেন। অঙ্কে আমার অসাধারণ জ্ঞান বিশ্ববিশ্রুত।কিন্ত অঙ্কে না লিখলে সংখ্যার মূল্য ও আতংক ঠিক বোঝা যায় না।
৩ টি মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া এসেছে এ পর্যন্ত:
আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে নিচের মন্তব্য-ফর্ম ব্যবহার করুন, অথবা, লগ-ইন করা অবস্থায় মন্তব্য করুন:
* ভাষা: মন্তব্যের ভাষা হওয়া উচিত (মূলত) বাংলা — অবশ্যই বাংলা হরফে। আর ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়।
** মডারেশন: মন্তব্যের ক্ষেত্রে এখানে প্রাক-অনুমোদন মডারেশনের চর্চা নেই। তবে যে-সব কারণ উপস্থিত থাকলে প্রকাশিত মন্তব্য বিনা নোটিশে (এবং কোনো ধরণের কারণ-দর্শানো ছাড়াই) পুরোপুরি মুছে দেয়ার বা আংশিক সম্পাদনা করার অধিকার "মুক্তাঙ্গন" সংরক্ষণ করে, সেগুলো হলো: (ক) সাধু এবং চলিত রীতির সংমিশ্রণ; (খ) ত্রুটিপূর্ণ বানানের আধিক্য; (গ) ভাষার দুর্বল, আঞ্চলিক, অগ্রহণযোগ্য বা ছাপার অযোগ্য প্রয়োগ; (ঘ) ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রবণতা, ছিদ্রান্বেষণ ও কলহপ্রিয়তা; (ঙ) অপ্রাসঙ্গিকতা ও বক্তব্যহীনতা। এ ব্যাপারে মডারেশন টিমের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তাই, চূড়ান্তভাবে পেশ করার আগে "প্রাকবীক্ষণ"-এর মাধ্যমে নিজ-মন্তব্যের প্রকাশিতব্য রূপ যাচাই করে নিন।
==নিবন্ধিত লেখকদের প্রতি==
লেখকের নিজস্ব পাতার প্রকাশিত কাজের তালিকায় আপনার পেশ করা মন্তব্যের নির্ভুল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে 'লগ-ইন' করা অবস্থায় মন্তব্য করুন।
==প্রকাশিত বক্তব্যের/মতামতের দায়ভার==
পোস্ট কিংবা মন্তব্যে প্রকাশিত বক্তব্য কোন অবস্থাতেই মুক্তাঙ্গন ব্লগের নিজস্ব মতামতের বা অবস্থানের পরিচায়ক নয়। বক্তব্যের দায়ভার লেখক এবং মন্তব্যকারীর নিজের। শুধুমাত্র "মুক্তাঙ্গন" নামের আওতায় প্রকাশিত বক্তব্যই ব্লগের সামষ্টিক অবস্থানকে নির্দেশ করবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
স্বাধীনতার পর পর বাংলাদেশে নদী ছিল প্রায় 1300। এখন সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে 230, তাও বর্ষা মওসুমে।
তাই মাছেভাতে বাঙালি কথাটাও রূপকথার মত বইয়ের পাতাতেই শুধু শোভা পাচ্ছে।
পাতাল থেকে তুলে আনতে হচ্ছে চাষাবাদের জল।
দারুণ লেখাটির জন্য মাসুদকে ধন্যবাদ।
1 মিলিয়ন টন = 10,000,00 টন
1 বিলিয়ন টন = 1000 মিলিয়ন টন
300 বিলিয়ন টন = 300 x 1000 মিলিয়ন টন
=300 x 1000 x 10,000,00 টন
= 300000000000 টন
[মন্তব্য-লিন্ক]
এই নদীমৃত্যুর জন্যে কী কেবল প্রকৃতিই দায়ী? আমাদের রাজনৈতিক দলগুলির অপরিণামদর্শী উন্নয়নপ্রতিশ্রুতিও কি কম দায়ী? পা বাড়ালেই নদী,- মাসুদ করিমের এই বাক্যটি পড়লেই মন ভরে ওঠে; কিন্তু এমন মানুষও এ দেশে আছেন পা বাড়িয়ে যারা নদী দেখতে চান না, তারা নদী দেখতে চান বিদেশ গিয়ে। তাই এদেশে অনায়াসে গড়ে উঠেছে বাঁধ, এসেছে নদীশাসন, দেখা দিয়েছে চর! নদীর দেশের মানুষ ছিলাম আমরা, অথচ নদীযানের ওপর মনযোগ না দিয়ে মনযোগ দিয়েছি সড়ক নির্মাণ করে গাড়ি চালানোর দিকে! এতো কেবল নদীর মৃত্যু নয়, এতো আমাদেরও মৃত্যু।
আমাদেরই পাপে নেমে এসেছে আমাদের এই মরণ।
[মন্তব্য-লিন্ক]
নদী মেরে ফেলার আরেক মহতী উদ্যোগ