বরাক উপত্যকার বাঙালি ভাষাশহীদদেরও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি
আসামের বাঙালিরা মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতর রাজ্যভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দানের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, শহীদ হয়েছেন — আমরা অনেকেই তাঁদের আত্মাহুতির কথা মনে রাখি না। বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও ভাষাশহীদদের পরিচিতি তুলে ধরার জন্য দুটি লেখা এখানে সংকলন করা হলো। অধ্যাপক মাহবুবুল হক ও প্রয়াত সাংবাদিক মুহম্মদ ইদ্রিসের এ প্রবন্ধ দুটি ছাপা হয়েছিল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ শাখা কর্তৃক প্রকাশিত সংকলন মাতৃভাষা-য়। সংকলনটির প্রকাশকাল : ১৮ বৈশাখ ১৪০৯, ১ মে ২০০২; সম্পাদক : আমীর রিদয়; সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন ডা. শুভার্থী কর। শুভার্থী নিজে বরাক উপত্যকা থেকে ঘুরে এসেছিলেন; তাঁর উদ্যোগেই বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি ও একষট্টির উনিশে মে-র দুই স্বতন্ত্র ভাষা আন্দোলনকে একই সঙ্গে যথাযোগ্য মর্যাদায় উপস্থাপন করে প্রকাশিত হয়েছিল মাতৃভাষা নামের সংকলনটি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তথ্যসমৃদ্ধ স্বতন্ত্র গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।
. . .
ভাষার লড়াই : বরাক উপত্যকায়
মাহবুবুল হক
১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল সে আন্দোলনের কথা বাংলাদেশের জনগণের মনে চির জাগরূক হয়ে আছে। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের নয় বছর পরে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য এমন আর একটি আন্দোলন হয়েছিল আসামের বরাক উপত্যকায়, সে কথা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। কিন্তু সে আন্দোলনে রক্ত ঝরেছিল। বাঙালির আত্মপরিচয় ও অধিকার রক্ষার সংগ্রামে সেখানেও শহীদ হয়েছিল এগারোটি তাজা প্রাণ।
পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন এবং বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের মধ্যে একাধিক ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় অভিন্নতা। প্রথমত, দুটি আন্দোলনই সংগঠিত হয়েছিল বাংলা ভাষার উপর অন্য ভাষার ভাষিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। দ্বিতীয়ত, দুটি আন্দোলনেই দলমত-ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে দুই ভূখণ্ডের বাঙালি জনগোষ্ঠী প্রতিবাদী সংগ্রামে অংশ নিয়ে আত্মদান করেছিল অধিকার আদায় করতে গিয়ে। অন্যদিকে এ দুই আন্দোলনের মধ্যে আলাদা বিশিষ্টতাও ছিল। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষীর (৫৬%) উপর পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া সংখ্যালঘিষ্ঠ (৭%) ভাষা উর্দুর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে আসামের বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠ বাঙালির ভাষা অধিকার খর্ব করে তাদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের অসমিয়াকে চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে।
বরাক উপত্যকায় বসবাসরত বাঙালির যে ভাষা আন্দোলন তা আকস্মিক কোনো ঘটনা ছিল না। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের মতোই তা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল দেশবিভাগের সময় থেকে। অবশ্য সে প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্নতর।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে দ্বিধাবিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার সময়ে শ্রীহট্টের অঙ্গচ্ছেদ ঘটিয়ে মুসলিম অধ্যুষিত সিলেট জেলাকে পাকিস্তানের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। তখন প্রায় তিন লক্ষ চা-বাগান শ্রমিক — যাদের অধিকাংশই হিন্দু — আসামে আশ্রয় নেয়। অনেক অবস্থাপন্ন হিন্দু পরিবার সিলেট ছেড়ে আসামে উদ্বাস্তু হয়। এই সব বাঙালি আসামে হয়ে পড়ে সংখ্যালঘু। স্বাধীন ভারতে বহু জাতি ও বহু ভাষাগোষ্ঠী অধ্যুষিত আসাম রাজ্যে বাঙালিকে বিদেশী এবং বহিরাগত রূপে চিহ্নিত করার হীন অপপ্রয়াস শুরু হয়। আসামের প্রতি বাঙালিদের আনুগত্য নিয়ে সংশয়, সন্দেহ ও প্রশ্ন উত্থাপিত হতে থাকে মহল বিশেষের উদ্যোগে প্ররোচনায়। এমনকি, অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতিকে অন্তরায় হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে। ‘আসাম শুধু অসমিয়াদের জন্য’ এই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিয়ে সেখানে বাঙালির অধিকার হরণের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চলতে থাকে। শুরু হয় বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলিকে সুপরিকল্পিতভাবে অসমিয়াকরণের প্রয়াস। বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলোতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে অসমিয়া ভাষা প্রবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং অন্যথায় তাদের অনুদান বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ফলে ১৯৪৭ থেকে ১৯৫১-র মধ্যে সেখানে ২৫০টি বাংলা মাধ্যমের স্কুলের মধ্যে ২৪৭টিই বন্ধ হয়ে যায়। এককথায় ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ভাষা, শিক্ষা, নিয়োগ, এমনকি ভূমি বণ্টন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আসাম সরকারের নীতি-অবস্থান হয়ে দাঁড়ায় বাস্তবে অনসমিয়া তথা বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রতি উপেক্ষা, বঞ্চনা ও বৈষম্যমূলক। এই প্রেক্ষাপটেই সমগ্র ব্রহ্মপুত্র এলাকায় শুরু হয় ভাষিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন এবং সেই সঙ্গে উৎপীড়ন ও দাঙ্গা।
আসামের বিধানসভাতেও অসমিয়াকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয় ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত বিধানসভায় অনসমিয়াদের বেলায় বাংলা, ইংরেজি কিংবা হিন্দি ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপনের বিধান ছিল। ঐ বছর নতুন আইন পাশ করে তা কেড়ে নেওয়া হয়। ঐ আইনে বলা হয় : ‘The business of the House shall be transacted in Assamese or in English.’ তবে ঐ বিধানে তখনও অধ্যক্ষের অনুমতিক্রমে মাতৃভাষায় বক্তব্য পেশের সুযোগ ছিল। কিন্তু ১৯৫৪ সালে বিধানসভায় একমাত্র অসমিয়াকে রাজ্যের ভাষা হিসাব গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব উত্থাপিত হলে তাতে আসাম রাজ্যের সর্বত্র অনসমিয়া ভাষীদের মধ্যে বিতর্ক ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অবশ্য বেসরকারিভাবে উত্থাপিত ঐ প্রস্তাব তখন বিবেচনা না করে স্থগিত রাখা হয়।
ভাষা আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে ১৯৬০-এর এপ্রিলে। ২১ ও ২২ এপ্রিল আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির এক সভায় অসমিয়াকে আসামের একমাত্র ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। এর পর পরই আসাম প্রদেশের শাসকবর্গ উগ্র ভাষাপ্রেমের পক্ষে অবস্থান নেন এবং অসমিয়াকে রাজ্যের একমাত্র সরকারি ভাষা করার অপচেষ্টায় সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেন। এর ফলে অনসমিয়া বিশেষত বাংলা ভাষাভাষী বাঙালিদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা এবং সরকারি দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে ২১ জুন ১৯৬০ শিলচরে ‘নিখিল আসাম বাঙ্গালা ভাষা সম্মেলন’-এর উদ্যোগে এক বিশাল সভা অনুষ্ঠিত হয়। লোকসভা সদস্য শ্রীদ্বারিকানাথ তেওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় আলতাফ হোসেন মজুমদার, নন্দকিশোর সিংহ, নিবারণচন্দ্র লস্কর, রথীন্দ্রনাথ সেন, গোলাম ছগির খান, শরৎচন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ বিশিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও নেতৃবৃন্দ গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রতিবাদ জানান। সভায় অসমিয়াকে রাজ্যভাষা করার আন্দোলনের নামে বাঙালিদের উপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করা হয়।
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনকে সংহত রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে ২ ও ৩ জুলাই ১৯৬০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় ‘নিখিল আসাম বাঙ্গালা ভাষা সম্মেলন’। এই সম্মেলনে আসাম রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পঁচিশ হাজার নরনারী সমবেত হয়। বিভিন্ন জাতি, উপজাতি ও গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সম্মেলন পরিণত হয় মহাসম্মেলনে। সভায় আসামের সরকারি ভাষা হিসেবে একমাত্র অসমিয়ার প্রবর্তন স্থগিত রেখে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়।
এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পরই সমগ্র ব্রহ্মপুত্র উপত্যকাব্যাপী শুরু হয় দাঙ্গা হাঙ্গামা। অসমিয়াপন্থী উগ্র দাঙ্গাবাজরা পথে নামে। নির্বিচারে বহু বাঙালির বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। লুঠতরাজ, হত্যা ও ধর্ষণ চলে অসমিয়া ভাষা আন্দোলনের নামে। ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্ব এতে পরোক্ষভাবে মদত জোগায়। যদিও কংগ্রেসের সবার এতে সমর্থন ছিল না। প্রশাসনের এক শ্রেণীর উগ্র জাতীয়তাবাদী কর্তাব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তা এসব ঘটনায় নেপথ্যে ইন্ধন জোগান।
১০ অক্টোবর আসাম বিধান পরিষদে আসাম সরকারি রাজ্যভাষা বিল উত্থাপন করা হয়। ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ বিল নিয়ে আলোচনা চলে। ২৪ অক্টোবর সকল সংশোধনী প্রস্তাব, অনুরোধ-নিবেদন উপেক্ষা করে রাজ্যভাষা বিল চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। এভাবে আসামের বিভিন্ন অসমিয়া উপজাতি গোষ্ঠী ও দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী লক্ষ লক্ষ বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার দাবি উপেক্ষিত ও অস্বীকৃত হয়। এর প্রতিবাদে অনেক সংসদ সদস্য সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। মাতৃভাষার অধিকার বঞ্চিত লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষোভে, দুঃখে, উত্তেজনায় ফেটে পড়ে। ১৯৬০-এর ৬ ও ৯ নভেম্বর নিখিল আসাম বঙ্গ ভাষাভাষী সম্মেলনের উদ্যোগে কনভেনশন আহ্বান করা হয়। কনভেনশন সংবিধান স্বীকৃত ভাষা-অধিকার সুরক্ষা করা ও মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় সহ বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্রমেই সংহত রূপ নিতে থাকে। ১৯৬০-এর ১৮-২০ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় কাছাড় উপত্যকা তথা বরাক উপত্যকার বাঙালি নাথ যুগী সম্প্রদায়ের ৩৬তম বার্ষিক অধিবেশন। ঐ অধিবেশনে বাংলা ভাষাকে অসমিয়া ভাষার মতো সরকারি মর্যাদা দেওয়া না হলে বাঙালি ও বাংলা ভাষাভাষী অধ্যুষিত অঞ্চল আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যক্ত করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬১ করিমগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় কাছাড় জেলা জনসম্মেলন। সম্মেলনে বাংলা ভাষাকে আসামের অন্যতম রাজ্যভাষা করার দাবি তোলা হয়। অন্যথায় সমগ্র জেলায় অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১৪ এপ্রিল ১৯৬১ নববর্ষের দিনে কাছাড় জেলা গণসংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে পালিত হয় ‘সংকল্প দিবস’। সংকল্প করা হয় মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার। এই সংকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম হিসাবে ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। দুই সপ্তাহ ধরে পদযাত্রীরা ২২৫ মাইল পথ অতিক্রম করেন। গ্রামে গ্রামে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে প্রচার চালান। ২ মে তাঁরা করিমগঞ্জে এসে পৌঁছলে তাঁদের স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১৯ মে ভাষা আন্দোলনের অংশ হিসাবে কাছাড় জেলার সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। আগের রাতে করিমগঞ্জে সংগ্রাম পরিষদের কার্যালয়ে চলে পুলিশি হামলা। আন্দোলন ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয় অনেক নেতা-কর্মীকে। সে খবর দাবানলের মতো রাতেই ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। শহর জেগে ওঠে উত্তেজনায়। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে জনতা নামে রাজপথে।
১৯ মে ভোর চারটায় শিলচর রেল স্টেশনে শুরু হয় সত্যাগ্রহীদের অবরোধ। জেলার সর্বত্র একই সময় থেকে সর্বাত্মক ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। দোকানপাট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। কোর্ট-কাছারি, ডাকঘর, অফিস-আদালত সব কার্যালয়ের সামনে চলে পিকেটিং। গ্রেফতার বরণ করেন হাজার হাজার কর্মী।
আন্দোলনের ব্যাপকতা দেখে শাসকগোষ্ঠী মাথা ঠিক রাখতে পারেনি। ভাষা আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য তারা বেছে নেয় চরম নির্যাতনের পথ। ঐ দিন দুপুর আড়াইটায় শিলচর রেল স্টেশনে তারা ধর্মঘটরত জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। শত শত লোক আহত হয়। গুলিতে শহীদ হন ১১ জন। এঁরা হলেন : শচীন্দ্র পাল, কানাই নিয়োগী, কমলা ভট্টাচার্য, সুনীল সরকার, সুকোমল পুরকায়স্থ, কুমুদ দাস, চণ্ডীচরণ সূত্রধর, তরণী দেবনাথ, হীতেশ বিশ্বাস, বীরেন্দ্র সূত্রধর ও সত্যেন্দ্র দেব।
১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলার পাকিস্তানে শাসকগোষ্ঠীর উগ্র ভাষানীতির মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন করে প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার [প্রমুখ], তেমনিভাবে ভাষা আন্দোলনের আর এক ইতিহাস রচিত হল বরাক উপত্যকায়। তাতে খচিত হল ১১ জন শহীদের নাম।
এই ঘটনায় সারা ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। প্রতিক্রিয়া হয় পূর্ব বাংলায়ও। ২১ মে শিলচর সহ সমগ্র কাছাড় জেলায় রেলকর্মীরা কর্মবিরতি পালন করেন। শিলংয়ে বিভিন্ন শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন শোক পালন করে। শোক পালিত হয় জলপাইগুড়িতে। কলকাতায় তীব্র প্রতিবাদ ওঠে সভা, সমিতি, মিছিলে। শহীদ স্মরণে শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। ২৩ মে গৌহাটি, শিলং, জাফলং, আইজল ও আগরতলায় পালিত হয় প্রতিবাদ দিবস। বিভিন্ন বাম দল সম্মিলিতভাবে ২৪ মে সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে পালন করে প্রতিবাদ দিবস। ২৪ মে বরাকের বুকে বিশ হাজার সত্যাগ্রহী আসাম সরকারের বিদ্বেষনীতির বিরুদ্ধে আমরণ সত্যাগ্রহের শপথ নেয়। ২৬ মে ঈদ উৎসবের দিন বরাক উপত্যকার সর্বত্র ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করে হত্যাকাণ্ডের নীরব প্রতিবাদে সামিল হয়। ২৯ মে পালিত হয় ভাষা শহীদ তর্পণ দিবস। শহীদের চিতাভস্ম নিয়ে অজস্র জনতা সামিল হয় মৌনমিছিলে।
. . .
একুশে ফেব্রুয়ারি ও বরাক উপত্যকার ভাষা শহীদ
মুহম্মদ ইদ্রিস
একুশে ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের চেতনা আন্তর্জাতিকীকরণের আবেগে আমরাও আপ্লুত। কিন্তু আমাদের এই ভূখণ্ডের বাইরে প্রতিবেশী ভারতে আসামের বাংলাভাষী অঞ্চল বরাক উপত্যকায় মাতৃভাষা বাংলার অধিকার দাবি করে যে পনের জন তরুণ-তরুণী আত্মোৎসর্গ করে গেছেন, তাঁদের কথা আমরা একবারও স্মরণ করি না। বাংলা ভাষার জন্য যে-দেশে যিনিই শহীদ হোন না কেন তিনি প্রত্যেক বাঙালিরই আদর্শ। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মবলিদান বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সার্থক হয়েছে। কিন্তু বরাক উপত্যকায় বাংলা ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ ১৯৬১ সালের ১৯ মে, ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট এবং ১৯৮৬ সালের ২১ জুলাই তিন দফায় পুলিশের গুলিতে পনের জন শহীদ হন। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় এই শহীদরাও তো আমাদের ভাই-বোন। তাঁদের ভুলে যাওয়ার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মবলিদানের ফলে জিন্নাহ্র দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তানি জাতিতত্ত্বের বুনিয়াদ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আর বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন হচ্ছে ১৮৭৪-এর বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ এবং ১৯৪৭-এর বঙ্গভঙ্গের ঐতিহাসিক পরিণাম।
একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা সংগ্রাম থেকে বরাক উপত্যকার ভাষা সংগ্রামের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথমত, আসামে বাংলাভাষীরা সংখ্যালঘু। পক্ষান্তরে, পূর্ববঙ্গের বাঙালির ছিল পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বরাকের ভাষা আন্দোলন সংখ্যালঘুর আন্দোলন আর বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন সংখ্যাগুরুর আন্দোলন। তাছাড়া, ভারতীয় সংবিধানে বিভিন্ন সংখ্যালঘু ভাষিক জনগোষ্ঠীর যে অধিকার সংরক্ষণ করা হয়, সেটাই বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শক্তি। অর্থাৎ বরাকের ভাষা আন্দোলন আসামের ভূমিপুত্র বাঙালির সংবিধান-স্বীকৃত অধিকার এবং একই সঙ্গে আসামের বহুভাষিক চরিত্র রক্ষার আন্দোলন। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সংবিধান তখনও (বায়ান্ন সালে) রচিত হয়নি। পূর্ববঙ্গের মানুষের ওপর এমন একটি ভাষা (উর্দু) চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছিল, যে ভাষা পূর্ববঙ্গে তো বটেই, গোটা পাকিস্তানে কারও মাতৃভাষা ছিল না। সাতচল্লিশে ভারত বিভাজনের সুবাদে ভারত থেকে পাকিস্তানে আগত মুষ্টিমেয় লোকই মাত্র উর্দুতে কথা বলতেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ভাষাকে উপেক্ষা করে তাদের ওপর উর্দু চাপিয়ে দিয়ে বাঙালির অস্তিত্ব-বিনাশের সুদূরপ্রসারী এক চক্রান্ত প্রতিহত করতে একশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথ রাঙিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা।
দ্বিতীয়ত, বহুভাষিক আসাম রাজ্যের অসমিয়াকরণের প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যে আসাম ভেঙে কয়েকটি স্বতন্ত্র রাজ্য গঠিত হওয়ায় বরাক উপত্যকার ভাষা সংগ্রামের সঙ্গে অনসমিয়াভাষী গোষ্ঠীসমূহের যোগসূত্রও ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে, আসামে বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম হয়ে দাঁড়ায় বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলন। তৃতীয়ত, পূর্ববঙ্গে (পূর্ব পাকিস্তানে) মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য একবারই শোণিত তর্পণ হয়েছিল। পক্ষান্তরে, মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় বরাক উপত্যকায় বাহাত্তরের সতেরই আগস্ট দু’জন এবং ছিয়াশির একুশে জুলাই দু’জন শহীদ হন। উনিশে মে, সতেরই আগস্ট ও একুশে জুলাই সত্ত্বেও বরাক উপত্যকার বাঙালির মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার শেষ কোথায়, কেউ জানে না। একুশে ফেব্রুয়ারির সংগ্রাম পরিণতি লাভ করেছে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র অর্জনের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশে বাংলাভাষা রাজনৈতিক ক্ষমতার ভাষা। যে ভাষার রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই সেই ভাষা অস্তিত্ব হারানোর আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়। আসাম তথা বরাক উপত্যকার বাংলাভাষার রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই।
বরাকের পনের জন ভাষাশহীদ এবং উনিশে মে, সতেরই আগস্ট ও একুশে জুলাই ভাষাশহীদ দিবসগুলি সম্পর্কে এই প্রজন্মের বাংলাদেশ কিছুই জানে না। একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানেও বরাকের ভাষাশহীদদের নাম কেউ উচ্চারণ করে না। অথচ একাত্তরের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বরাকের বাঙালি। সেদিন বিশ্বের যেখানেই বাঙালি ছিলেন প্রত্যেকেই বাঙালির স্বাধীনতার সপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এই অভূতপূর্ব ঐক্য রাজনীতির চোরাবালিতে হারিয়ে গেল কেন? বরাক উপত্যকার ভাষা সংগ্রামও নির্বাচনী রাজনীতির বেড়াজালে আটকে গেল। আসামের সরকারি ভাষা হিসেবে অসমিয়ার সঙ্গে বাংলাভাষাকেও স্বীকৃতি দানের দাবি আজও উপেক্ষিত।
বরাক উপত্যকার ভাষাশহীদ পরিচিতি :
১. কমলা ভট্টাচার্য :
বাংলাভাষা সংগ্রামের একমাত্র মহিলা শহীদ কমলা ভট্টাচার্য মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েই ভাষা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ষোল বছর বয়সে তিনি শহীদ হন। পিতৃহীন কমলা ছিলেন অবিবাহিতা, থাকতেন ভাই রামরমণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে শিলচর শহরে। তাঁদের পরিবার ১৯৫০ সালে সিলেট ছেড়ে কাছাড়ে আশ্রয় নেন। তিন বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে কমলা ছিলেন তৃতীয়।
২. শচীন্দ্রমোহন পাল :
মাত্র উনিশ বছর বয়সে মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার জন্য বুক পেতে নিয়েছিলেন আসাম সরকারের বুলেট শচীন্দ্র পাল। তাঁদের পূর্বনিবাস ছিল হবিগঞ্জ মহকুমার নবিগঞ্জের সন্দনপুর গ্রামে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে শচীন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। কাছাড় হাইস্কুল থেকে মেট্রিক পরীক্ষা দেন।
৩. কানাইলাল নিয়োগী :
আদিনিবাস ময়মনসিংহ জেলার খিলদা গ্রামে। মেট্রিক পাশ করে ১৯৪০ সালে রেলে চাকরি নেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে শহীদ হন। তখন তাঁর মা শান্তিকণা নিয়োগীর বয়স ৭০ বছর। পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল নিয়োগী আগেই প্রয়াত।
৪. কুমুদ দাস :
পিতা কৃষ্ণমোহন দাস মৌলভিবাজারের জুরি থেকে উদ্বাস্তু হয়ে কাছাড়ে যান। মায়ের মৃত্যুর পর আট বছর বয়সে কুমুদ দাস ত্রিপুরায় মামার বাড়িতে থেকে এম.ই. পর্যন্ত পড়ে গাড়িচালকের পেশা গ্রহণ করেন। পরে শিলচরের তারাপুরে চা-দোকানে বয়ের কাজ নেন। বৃদ্ধ পিতা, চার বোন ও এক শিশু ভাইকে নিয়ে সংসার ছিল তাঁদের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন কুমুদ দাস।
৫. তরণী দেবনাথ :
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাতচল্লিশে ভারত বিভাগের সময় শিলচরে গিয়ে বসবাস [শুরু] করেন পিতা যোগেন্দ্র দেবনাথ। মৃত্যুকালে বয়ন ব্যবসায়ী তরণীর বয়স ছিল মাত্র একুশ বছর।
৬. হীতেশ বিশ্বাস :
বাস্তুহারা হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পিতৃহীন হীতেশ বিশ্বাস মাত্র বার বছর বয়সে ত্রিপুরার খোয়াই শহরের উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দা হন। মা, ছোট ভাই ও এক বোনের সংসার ছিল তাঁদের। শিলচর শহরে ভগ্নিপতির বাসায় অবস্থানকালে মাতৃভাষার জন্য জীবনদান করেন।
৭. চণ্ডীচরণ সূত্রধর :
পিতৃহীন চণ্ডীচরণ সূত্রধর ১৯৫০ সালে হবিগঞ্জের জাকেরপুর গ্রাম থেকে মামার সঙ্গে উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নেন শিলচরে। পড়াশোনা এম.ই. পর্যন্ত। জীবিকা হিসেবে পৈতৃক বৃত্তি কাঠমিস্ত্রির কাজেই নিয়োজিত করেন নিজেকে। মাত্র বাইশ বছর বয়সে ভাষার জন্য আত্মদান করেন। তিনি তখন একা শিলচরের রাঙ্গির খাড়িতে বাস করতেন।
৮. সুনীল সরকার :
ঢাকার মুন্সিবাজারের কামারপাড়া থেকে ভারত বিভাজনের বলি হয়ে শিলচর শহরের নূতন পট্টিতে গিয়ে ঘর বাঁধেন [সুনীল সরকারের] পিতা সুরেন্দ্র সরকার। ব্যবসায়ী সুরেন্দ্রের তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে সুনীল ছিলেন সবার ছোট। মাত্র এম.ই. পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন সুনীল।
৯. সুকোমল পুরকায়স্থ :
করিমগঞ্জের বাগবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা পিতা সঞ্জীবচন্দ্র পুরকায়স্থ ডিব্রুগড়ে ব্যবসা করতেন। অসমিয়াকে একমাত্র রাজ্যভাষা করার আন্দোলনের নামে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ১৯৫৯ সালে ‘বঙ্গাল খেদা’ অভিযানের শিকার হয়ে সপরিবারে স্বগ্রামে চলে আসেন। ভাষা সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়ে মাতৃভাষার ঋণ শোধ করেন সুকোমল।
১০. বীরেন্দ্র সূত্রধর : শৈশবে বাস্তুহারা হয়ে পিতামাতার সঙ্গে নবিগঞ্জের [হবিগঞ্জের?] বহরমপুর গ্রাম থেকে শিলচর যান। জীবিকার অন্বেষণে বর্তমান মিজোরামের রাজধানী আইজল শহরে গিয়ে কাঠমিস্ত্রির পেশা অবলম্বন করেন। বিয়ে করেন ত্রিপুরার ধর্মনগরে। পরে কাছাড় জেলায় অবস্থিত মণিপুর চা বাগানের কাছে ঘর ভাড়া নেন। মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ১৮ বছরের বিধবা স্ত্রী ও এক বছর বয়সী কন্যা রেখে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে আত্মদান করেন তিনি। শিলচর রেল স্টেশনে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে ২০ মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১১. সত্যেন্দ্রকুমার দেব :
মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে মাতৃভাষার বেদীমূলে জীবন উৎসর্গ করেন। উদ্বাস্তু হয়ে ত্রিপুরায় নূতন রাজনগর কলোনিতে তিন বোন ও মাকে নিয়ে আশ্রয় নেন পিতৃহীন সত্যেন্দ্র। মা ও বোনকে সেখানে রেখে জীবিকার অন্বেষণে শিলচরে গিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পড়াশোনা ছিল প্রাইমারি পর্যন্ত। তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয় ২০ মে শিলচর রেল স্টেশনের পুকুর থেকে।
১৩ টি মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া এসেছে এ পর্যন্ত:
আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে নিচের মন্তব্য-ফর্ম ব্যবহার করুন, অথবা, লগ-ইন করা অবস্থায় মন্তব্য করুন:
* ভাষা: মন্তব্যের ভাষা হওয়া উচিত (মূলত) বাংলা — অবশ্যই বাংলা হরফে। আর ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়।
** মডারেশন: মন্তব্যের ক্ষেত্রে এখানে প্রাক-অনুমোদন মডারেশনের চর্চা নেই। তবে যে-সব কারণ উপস্থিত থাকলে প্রকাশিত মন্তব্য বিনা নোটিশে (এবং কোনো ধরণের কারণ-দর্শানো ছাড়াই) পুরোপুরি মুছে দেয়ার বা আংশিক সম্পাদনা করার অধিকার "মুক্তাঙ্গন" সংরক্ষণ করে, সেগুলো হলো: (ক) সাধু এবং চলিত রীতির সংমিশ্রণ; (খ) ত্রুটিপূর্ণ বানানের আধিক্য; (গ) ভাষার দুর্বল, আঞ্চলিক, অগ্রহণযোগ্য বা ছাপার অযোগ্য প্রয়োগ; (ঘ) ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রবণতা, ছিদ্রান্বেষণ ও কলহপ্রিয়তা; (ঙ) অপ্রাসঙ্গিকতা ও বক্তব্যহীনতা। এ ব্যাপারে মডারেশন টিমের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তাই, চূড়ান্তভাবে পেশ করার আগে "প্রাকবীক্ষণ"-এর মাধ্যমে নিজ-মন্তব্যের প্রকাশিতব্য রূপ যাচাই করে নিন।
==নিবন্ধিত লেখকদের প্রতি==
লেখকের নিজস্ব পাতার প্রকাশিত কাজের তালিকায় আপনার পেশ করা মন্তব্যের নির্ভুল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে 'লগ-ইন' করা অবস্থায় মন্তব্য করুন।
==প্রকাশিত বক্তব্যের/মতামতের দায়ভার==
পোস্ট কিংবা মন্তব্যে প্রকাশিত বক্তব্য কোন অবস্থাতেই মুক্তাঙ্গন ব্লগের নিজস্ব মতামতের বা অবস্থানের পরিচায়ক নয়। বক্তব্যের দায়ভার লেখক এবং মন্তব্যকারীর নিজের। শুধুমাত্র "মুক্তাঙ্গন" নামের আওতায় প্রকাশিত বক্তব্যই ব্লগের সামষ্টিক অবস্থানকে নির্দেশ করবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন নিয়ে কয়েকটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা :
১, ২, ৩।
বরাক উপত্যকার বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপঞ্জি নিয়ে একটি তথ্যসমৃদ্ধ লেখা :
এখানে।
বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত প্রাসঙ্গিক অন্যান্য লেখার লিংক-ও এখানে তুলে দেওয়া যেতে পারে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
ধন্যবাদ, সুমনদা। ব্যাপারট নিয়ে লিখবো ভাবছিলাম। এমন সময়… মেঘ না চাইতেই জল।
চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।
[মন্তব্য-লিন্ক]
https://www.youtube.com/watch?v=GyrPDlB6O6Y
আমার বাংলা ভাষা – তথ্যচিত্র
[মন্তব্য-লিন্ক]
পড়লাম। ভল লাগল মাতৃভাষা বাংলা আমার অহংকার
[মন্তব্য-লিন্ক]
গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতায় ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’ ও ‘নবজাগরণ’-এর উদ্যোগে আসামের ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপিত হল।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আমি ঠিক জানি না অপ্রাসঙ্গিক হবে কি না- মাতৃভাষায় কথা বলার শাস্তি পেতে হয়েছে আইরিশদেরও। ১৮৭১ বৃটিশরা জারি করে যে, পড়ালেখা সব হতে হবে ইংরেজিতে। আইরিশ ভাষা যাবে নির্বাসনে। আইরিশ ভাষার শিক্ষকরা বেকার হয়ে গেলেন। কেউ কেউ গোপনে আইরিশ পড়াতে গিয়ে ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হন। মারা যান কেউ কেউ।
পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে এখন। আইরিশ এখন আয়ারল্যান্ডে পড়ান হয়। রাস্তা-ঘাটের যেসব নাম ইংরেজি করা হয়েছিল, সবগুলোর আইরিশ নাম ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
পড়লাম। মনে রেখেছেন। দু’জন ব্লগার ইতিবৃত্ত গুলো লিখেছেন এর জন্যে ধন্যবাদ! কিন্তু গোটা ঘটনাচক্রকে বাঙালি বৃত্তে টেনে আনা হয়েছে। ১৯৬১তে শিলঙ ছিল অসমের রাজধানী। এখন সেটি মেঘালয়ের রাজধানী। সেই মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম কেন অসম থেকে বেরিয়ে গেল — এই প্রশ্ন করলেই দেখবেন সমস্যাটা কেবল বাঙালিকে নিয়ে ছিল না। হ্যা, বাঙালি বড় জনগোষ্ঠী তাই বাইরে প্রচারটা বেশি পায়। যদিও বাঙালির এখন অব্দি অর্জন লবডঙ্কা। কিচ্ছু নেই। এই উন্নাসিক বাঙালি বৃত্তে টেনে দুনিয়াকে দেখবার জন্যেই। এই নিয়ে আমার একটা লেখা দেখতে পারেন, এখানে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
এই মুহুর্তে ইউক্রেইনের মানুষ প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ। তাদের সংসদ রুশ ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছে। অথচ রুশ বলে মাত্র ১০% মানুষ। এর ফলে হাঙ্গেরিয়ান, বুলগেরিয়ান, রুমানিয়ান ইত্যাদি ভাষাও দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে চালু হয়ে যাবে বলে তারা মনে করে। গত ৪ জুলাই এর প্রতিবাদে ইউক্রেনবাসীদের মিছিলে পুলিশের হামলায় বহু মানুষ আহত হয়। এর প্রতিবাদে সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার পদত্যাগ করেছেন।
[মন্তব্য-লিন্ক]
মূল সংবাদ এখানে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
[মন্তব্য-লিন্ক]
কার নেতৃতে ১৯ শে মে আন্দোলন হয়েছিলো বিশদ কিছু পেলাম না …
[মন্তব্য-লিন্ক]
[মন্তব্য-লিন্ক]
[…] বরাক উপত্যকার বাঙালি ভাষাশহীদদেরও শ্…, রেজাউল করিম সুমন […]