দেশীয় সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় সমূহের বিচার
সাহিত্য এমন এক কাণ্ড যার কোনো সীমানা নাই। বলা ভাল সীমানা মানে না। কারণ সাহিত্য হচ্ছে সবচে মৌলিক প্রার্থনা। কোথাকার এক হোমার তাঁর প্রভাব আজও বিদ্যমান। ওমর খৈয়ম, হফিজ, কিটস, ইএটস, এলিয়ট, কভাফির কবিতার প্রভাব আজও দেখা যায় রবীন্দ্রনাথে, জীবনানন্দে। কারণ সাহিত্যের ব্যাপ্তি জগতের সকল বস্তুর ভেতর বিদ্যমান। ভাবের হাত ধরে ভাব ছড়িয়ে পড়ে নিরন্তর অভাবের সীমানাহীনতায়।
কিন্তু যখন কালের বর্জ্যস্রোতে ভেসে যায় মানুষ, পুরোদেশ যখন ডুবে যেতে থাকে ডুবন্ত কোনো জাহাজের মত তখন স্রোতের ভেতর ডুবে যাওয়াই যেন এদেশের সাহিত্যিকদেরও নিয়তি। তেমনি নিয়তিকেই বরণ করে নিয়েছে এ দেশীয় সাহিত্যিক সম্প্রদায়। এদেশের প্রত্যেক সাহিত্য সেবিরাই এখন সাহিত্যের শত্রু। তারা সকলে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে কীভাবে বাংলাদেশী সাহিত্যকে সংকীর্ণ থেকে আরো সংকীর্ণ, স্থূল থেকে আরো স্থূলত্বের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। এ অবস্থার জন্য শুধু লেখককুলের ওপর দোষারোপ করলে একচোখে দেখা হবে। আরো দায়ী ভাগ পরবর্তী যোগ-বিয়োগ।
এ ব্যাপার নিয়ে কোনো তর্কই হতে পারে না যে বাংলাদেশীরা পঁয়ত্রিশ বছরের এক মেরুদন্ডহীন জাতি। ব্রিটিশরা চলে যাবার পর এই জাতির ভেতর এমন একজন মানুষও জন্মাননি যাকে ঐতিহাসিক অনুকরণীয় চরিত্র বলা যেতে পারে। তাদের বড়জোর গ্যাংস্টার ও বিদেশীদের এজেন্ট বলা যায়। এরা সাহিত্য, ইতিহাস, ধর্ম সবকিছুকেই বিকৃত করেছে। এদের কোনো সংস্কৃতি ছিল না। এখনো নাই। তলাকার কালো রাজনীতির প্রভাব পড়েছে সবখানে দুরারোগ্য রোগের উপসর্গ হয়ে। সবখানে একটা অদৃশ্য ক্ষুদ্র স্বার্থপরতার জাল টানা আছে। এদেশের সাহিত্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মত কোনো ছোট কাগজের আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। যে কারণে তারা প্রতিষ্ঠিত ধনী প্রকাশনাগুলোকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের মত স্বাধীন কাজ করে যেতে পারছে। ষাটের দশকের সাহিত্য পত্রিকা কন্ঠস্বর সম্পর্কে পত্রিকাটির সম্পাদক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ গর্ব করে বলেন তিনি এদেশের সাহিত্যে নতুন একটি যুগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ষাটের এই পত্রিকাটিতে যারা লিখত তারা সবাই আজ তারকা। এ কথাটি সত্য কন্ঠস্বরে যারাই লিখত সবাই আজ তারকা, কেউ লেখক হননি। সকলেই প্রায় মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রেম নিবেদন করার বাণী লেখা অনেক সহজ করে দিয়েছেন। এদের উপর মূলত প্রভাব পড়েছিল কলকাতার পঞ্চাশের লেখক গোষ্ঠীর। তাদের ওপর ছিল আমেরিকান বিট জেনারেশনের। পঞ্চাশের দশকে কলকাতায় বিট গোষ্ঠীর হোতা গীন্সবার্গ এলে তাদের অপ্রাতিষ্ঠানিক ধারাটার প্রভাব পড়ে পঞ্চাশের লেখকদের ওপর। গীন্সবার্গকে যথাযতভাবে গ্রহণ করতে পারলে না হয় কথা ছিল। সাহিত্যে এবং চালচলনে গীন্সবার্গের প্রধান বৈশিষ্ঠ্য ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে চুড়ান্ত নাজেহাল করা। ধনতন্ত্রের পালিশ করা আত্মাহীন মার্কিন মুলুকের অহংকারী অন্তসারশূন্যতাকে খুলে দেখানোই ছিল তাদের লক্ষ্য। তারা ছিল ভোগের বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে না পারা প্রজন্ম। কিন্তু কলকাতার সংকটসংকুল নিম্নমধ্যবিত্ত কবিরা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিট জেনারেশনকে অনুকরণ করতে গিয়ে নিজেদেরকে লক্ষ্যহীন স্থুলতায় নিক্ষেপ করলো। বেশ্যাদের তিরিশেই গ্রহণ করেছিল আধুনিকেরা। পঞ্চাশীরা যে কোনো বয়সের যে কোনো নারীকে এমনকি মা মেয়েকেও একসাথে ভোগ করবার স্বপ্ন দেখতে থাকে সারাদিন। এবং এই গোষ্ঠীটি এতবেশি প্রচার পেয়েছিল যে পরবর্তী একযুগ এরা রাজত্ব করল শতশত রিম কাগজে। পুরো একযুগ মহান সাহিত্যের ধারেকাছেও যেতে পারলনা পাঠক। ঠিক এই গোষ্ঠীটির প্রভাব পড়েছিল এই কন্ঠস্বর পত্রিকায়। সেটা কন্ঠস্বর পত্রিকার প্রথম সংখ্যার ইশতেহারটা পড়লে বুঝা যায়। এরা লিটল ম্যাগাজিন করবার ধারাটাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে যায়।
এরপর থেকে এদেশে লিটল ম্যাগাজিন করে আত্মহারা, স্বমেহী লোকজন। তারা ছোট কাগজ করে দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতার সাংবাদিকদের অপাঠ্য না-কবিতা ছাপানোর জন্য। ঘনিষ্ঠতার সূত্রে যেন তার একটা কবিতা ঐসব পত্রিকার রঙ্গিণ বিজ্ঞাপনের পাশে ছাপানো হয়। আর অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে কজনের টাকায় ওই ছোট কাগজ ছাপা হয় তাদের নিজেদের তোয়াজ তোষণে ভরা। এসব গ্রাম্য মানসিকতার অ্যামিবা লেখকেরা এত অল্পে তুষ্ট যে তারা মনে করে যেখানে কালোবাজারী কালোচশমাধারী পেশাদার খুনী ও উচ্চবিলাসী সিনেমা নাটুকে বেশ্যাদের ছবি ছাপা হয়, তার পাশে তার একটা লেখা ছাপানো মানে জীবন ধন্য হয়ে গেল। আর বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব মহাপণ্ডিতেরা সাহিত্য পাতাগুলোতে সাংবাদিকতা করে তাদের নামে কিছু লেখা সাহিত্যপরিপন্থী কাজ হবে। এদের সাহিত্যের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট নাই, দরকারও নাই তাদের। কারণ তাদের ছলনা সম্পর্কে তারা জ্ঞাত।
এক পত্রিকার এরকমই এক প্রাণীকে একবার বলতে শুনেছিলাম। রিলকের ‘সরলা ইরিন্দিরা’ (Innocent Eréndira) বইটা নাকি তার ভাল লেগেছিল। তাকে আর বইটার লেখকের নাম বলা হয়নি। আরেকজনকে দেখেছিলাম ভাগযোগ করে নবাগত এক কবিকে বোঝাচ্ছেন কবিতা হচ্ছে আসলে চার মাত্রার খেলা। প্রাণীগুলো আবার নিজেদের মনে করে এজরা পাউন্ড, এলিয়ট, বুদ্ধদেব, সুধীন ইত্যাদির মত সম্পাদক। কয় অক্ষরে অরবৃত্ত হয় এটাই হচ্ছে এদের কবিতা মাপার মাপকাঠি। গল্পকে তারা মনে করে মানিক, তারাশংকরের মত কিনা যেন পৃথিবীতে আর কোনো ইতালো কালভিনো, বোর্হেস, পিটার বিকসেল, রমানাথ রায় গল্প লিখেন নি। প্রত্যহ একটা দৈনিকের সাহিত্য পাতায় যা ছাপা হয় তার বৃহদাংশজুড়ে থাকে কপট সাহিত্য সম্পাদকের আত্মীয়-স্বজন,ভাই-বেরাদর, শ্যালক, তাদের নিয়মিত হাজিরা দেনাঅলা পা’চাটা সরীসৃপদের।
দৈনিক পত্রিকা হচ্ছে দৈনিক পত্রিকা। সারাদিনের খুন ধর্ষণ ও যাবতীয় পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভরা। সে সাহিত্যের কাছে দায়বদ্ধ নয়। ব্যবসাই তার লক্ষ্য। যেটা এদেশের প্রথম শ্রেণীর পত্রিকাগুলোর অন্যান্য ব্যবসাবাণিজ্য প্রসারের তোড়জোড় দেখলে বুঝা যায়। কিংবা সুক্ষমাথার দূর্ণীতিবাজ ব্যবসায়ীরা নিজেদের কালোটাকা সাদা করবার জন্য এই সব পত্রিকা করেছ। যেনতেনভাবে পৃষ্ঠা ভরানোই হচ্ছে তার কাজ। দেশের সাহিত্যের মেরুদণ্ড কীরকম নড়বড়ে হলে, কী রকম প্রতিশ্রুতিশীলতার অভাব হলে একটা দেশের সকল লেখকরাই এই দৈনিকের পাতাগুলোর ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ এক বিরাট প্রশ্ন।
পুঁজির ক্ষমতা আছে সে মুহ’র্তেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যেতে পারে। তাই এই স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, মূর্খামির জঘন্য প্রভাব পড়ে মফস্বলে। যেখানে ভাল বই পৌছেনা। আর এসব সাহিত্য পাতায় লেখাটেকা দেখে লোকজন ভাবে যে এগুলোই বুঝি সাহিত্য। এবং নামগুলোর দিকে তাকিয়ে তারা ভাবে এরাই বুঝি সাহিত্যিক। ঢাকায় যাদের লেখা ছাপা হয় তারা ছাড়া এসব লেখা অন্য কেউ দেখে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করি।
পাকিস্তান আমল হতে এদেশে এমন পনেরটা বইও ছাপা হয় নাই যেগুলো পড়ে শেলফে সংরক্ষণ করা যায় পরবর্তীতে পড়ার জন্য । একাত্তর পরবর্তী এদেশে যারাই ক্ষমতা পেয়েছে গণগ্রন্থাগার গুলোকে ব্যবহার করেছে অশিতি আমলা ও প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী পদবাচ্যের আত্মীয়-স্বজনদের অপাঠ্য হজ্বে যাবার স্মৃতি, জিয়ার দর্শন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন জাতীয় আবর্জনা রাখবার ডাষ্টবিন হিসাবে। আর এসব বই সরকারী টাকায় ছাপানো সরকারী টাকায় কেনা।
কবিতার অবস্থা সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে কবিতাহীন দানোয় পাওয়া এক ঘোরের ভেতর তাদের বাস। তাদের কবিতার ভেতর কবিতা ছাড়া সব আছে। আর যে গল্পগুলো এখন এখানে ছাপা হচ্ছে তাদের ফর্ম হচ্ছে মান্ধাত্বার মায়ের আমলের। তাদের অভিজ্ঞতা একটা কুনোব্যাঙের চাইতেও কম। তবু হরদম মেলা আসলে অন্ধ দানবের মত রিমরিম কাগজে এসব … ছেপে বেচঁতে আসে বটতলার বাজারে। দৈনিক পত্রিকাগুলো সের দরে তারকা বানায় ও বেঁচে। এটা তাদের একধরনের পত্রিকা কাটতি ব্যবসায়। আর এসব প্রাণীগুলো তারকা হবার আশায় সবকিছু জলাঞ্জলি দিতে পারে মায় আত্মা পর্যন্ত। আদর্শহীনতাই এখানে আদর্শে পরিণত হয়েছে।
আদর্শ বলতে এখানে কোনো দার্শনিক বা ধর্মীয় চিন্তাধারাকে বুঝানো হচ্ছে না। সাহিত্যের একটা নিজস্ব আদর্শবোধ আছে। যা জগতের তাবত মতবাদের ঊর্ধ্বে ও তাবত মতবাদের চাইতে সত্য। কারণ সত্য উচ্চারণ ছাড়া সাহিত্যের আর কোনো কাজ নাই। সাহিত্যের আদর্শ জগতের শ্রেয় আদর্শ। একজন সৎ সাহিত্যিক ত্রিকালদর্শী। যে কারণে লু স্যুন ডাক্তারী ছেড়ে লিখতে আসে। যে কোনো ধর্মপ্রণেতার চাইতেও তিনি মহৎ।
এ বড় আজব দেশ। গ্রামদেশ থেকে কবিতা লিখতে আসা একটা শাদা ছেলে চক্রে পড়ে পরিণত হয় হাস্যকর ভাঁড়ে অথবা আত্মাহীন বেশ্যার দালালে। এসব হতে চেয়েছিলাম লেখকদের সবসময় দেখা মিলবে দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্যপাতার সাংবাদিকদের পশ্চাতে।
কিছুদিন শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদকে তারকা বানিয়ে খুব বিক্রি করেছে দৈনিক পত্রিকাগুলো। সন্দেহ নাই একসময় ভাল কয়েকটা কবিতা লেখার চেষ্টা করেছিলেন শামসুর রাহমান। কিন্তু শেষের দিকে শামসুর রাহমানের ভিমরতি হয়েছিল। বাজারের ফর্দ, ঔষধের স্লিপ থেকে শুরু করে যা-তা কবিতার নামে চালিয়ে অচিরেই একটা নিকৃষ্ট ভাঁড় ও বিরক্তিকর চরিত্রে পরিণত করেন নিজেকে। তাঁর শত্রুরা আর তোশামোদ কারীরা হয়তো তাঁকে এসব পরামর্শ দিয়ে থাকবে। এই শামসুর রাহমান মরার পরও ভূতের মত প্রত্যহ উদয় হয় এইসব আবর্জনাময় দৈনিকের সাহিত্যপাতায়। এদের অধিকাংশই শামসুরের দ্বারা পত্রিকায় সাংবাদিকতা প্রাপ্ত। সাহিত্যপাতার এসব কেঁচো সম্প্রদায় বাস করে গর্তে। শামসুর রাহমান খুব রুচিহীন ট্রাডিশনাল লোক ছিলেন। রবার্ট ফ্রস্টের মত মহৎ কবিকে তিনি বাংলাভাষায় একেবারে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। সেটা রবার্ট ফ্রস্টের মুল কবিতাগুলোর সাথে শামসুরের অনুদিত কবিতাগুলো মিলিয়ে পড়লে বুঝতে পারা যায়। তার অনুদিত ফ্রস্টের কবিতাগুলো পড়লে মনে হয় এদেশীয় চতুর্থ শ্রেণীর কবিরাও ফ্রস্টের চাইতে ভাল লেখে। তিনি পশ্চিমবঙ্গীয় আধুনিকদের অনুকরণে এসব করেছিলেন।
আর আল মাহমুদকে তো রীতিমত ভণ্ডপীর উপাধি দেয়া যেতে পারে। আত্মার গরিমাহীন যৌন উপোসী এই লোক কবিতার দোহাই দিয়ে জীবন সুদ্ধ চালিয়াতি করেছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক গুণ্ডাপাণ্ডা, আর্মি স্বৈরাচার সরকারের পা-চাটা সে। তার কবিতা- গল্প- উপন্যাস পদবাচ্য পড়লে মনে হয় আদি রসাত্মক লেখক শ্রী রসময়গুপ্তই একমাত্র তার সমকক্ষ লেখক। নারীদেহকে তার মত এত নোংরা ও বিকৃতভাবে অন্য কোনো কলমধারী ব্যবহার করে নাই। ঐতিহ্য প্রকাশিত একটি সাক্ষাতকারের বইয়ে তিনি বলেছেন এখন নাকি কবিদের ধর্ষণ করার সময় এসেছে। এই বিকৃত মানুষটাই আবার ইসলামী সংস্কৃতির জিগির তোলে আর আত্মপ্রচারকালে রসিয়ে রসিয়ে বলে তারা নাকি আরব থেকে এসেছে। এদেশীয় মুসলমানদের ভেতর অনেক হীনম্মন্যতার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তারা অধিকাংশই মনে করে যে তারা মহম্মদের বংশধর, তারা এসেছে আরব থেকে। কিন্তু যে কেউ নৃবিজ্ঞান না ঘেটেই চেহারা দেখেই বলে দিতে পারে মাহমুদ মঙ্গোলিয়ান প্রজাতির লোক। তার চেহারায় মঙ্গোলিয়ানদের ছাপ স্পষ্ট।
কবিতা হচ্ছে একই জীবনের অন্যরকম উৎসার এটা গভীরভাবে অনুভব করবার সময় এদের কারো হয়েছে বলে মনে হয় না। উনিশ শতক, পশ্চিমবঙ্গের দলিত গোষ্ঠী ও এদেশীয় গুটিকয় সাহিত্যিকদের বাদ দিলে এদেশীয় সাহিত্য এখনো শিশুসাহিত্য। একটা পয়ত্রিশ বছর বয়সী স্বাধীন দেশের সাহিত্যে যে পরিমাণ অগ্রগতি হওয়া উচিত ছিল তা তো হলইনা। একাত্তরের মত একটা এপিক ওয়ার যার শেকড় বায়ান্ন পর্যন্ত বিস্তৃত তা নিয়ে একটা মহৎ উপন্যাস পর্যন্ত লেখা হলনা। একাত্তর সম্পর্কে জানতে গেলে আমাদের একমাত্র সহায় মেজর(অব:)দের অপাঠ্য স্মৃতি কথা।
এদেশে সাহিত্য এখনো ফটকাবাজ তালিবাজ ও বটতলায় সীমাবদ্ধ। সন্দেহ নাই এ সাহিত্যকে উপরতলায় তথা আর্ন্তজাতিক মহৎ সাহিত্যের কাতারে নিয়ে যাওয়া সাহিত্যিকদের আরেকটি দায়িত্ব। যার কারণে বৈদেশিক ভাষা থেকে প্রচুর অনুবাদ হওয়া দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ অনুবাদকই ছোটলোক। অনুবাদ ক্ষেত্রে তাদের জালিয়াতি আতংকিত হবার মত। তাদের অনূদিত বইটি হাতে নিলে লজ্জা হয়। দেখা যায় বইটির সামনে পিছনে ফ্ল্যাপে অনুবাদকের নাম, ছবি, জীবনী ইত্যাদি ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। অনেক সময় অনুবাদকদের এসব অপকর্মের দুর্গন্ধে মূল লেখককে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে।
কবীর চৌধুরীর মত অশীতিপর বৃদ্ধ অনুবাদকও এইসব অপকর্ম করেন নিয়মিত। আত্মপ্রচারের হীনমন্যতাবোধ, ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখার শিশুসুলভ যৌনবাসনা এখনো আমরা পরিহার করতে পারি নাই। যেন মূল লেখকরা আমাদের বোন জামাই অথবা কাকা লাগে। ফলে হাতে নেয়ার পর মনে হয় এইরকম হীনমন্য এক লোকের অনুবাদ আর কী পড়ব। পড়ার রুচিটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর কিছু অনুবাদক আছে আরো অসৎ ও দুর্নীতিবাজ। অর্ধেক লেখা বাদ দিয়ে বইটি ছেপে দেয়। যেন তাড়াহুড়ো করে ইতিহাসে স্থান করে নেয়া যায়। আর এসব ’হতে চেয়েছিলাম’ লেখকদের আবর্জনার স্তুপ ছেপে চলে বাংলাবাজার ও শাহবাগের প্রকাশকদল। অধিকাংশ প্রকাশকরা অশিক্ষিত। প্রকাশকদের মধ্যে শিক্ষিত মার্জিত লোক নাই বললেই চলে। কারণ এরা চাকরী করতো প্রেসে, বাইণ্ডিংখানায়। সহজে দুইপয়সা কামানোই হচ্ছে এসব জীবদের জীবনের ব্রত। একবার বাংলাবাজারের এক নামকরা প্রকাশকের কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করছিলেন বড় পত্রিকার সাংবাদিক নয়, কলেজে পড়ায় না সে কী করে লেখক হতে পারে। তার ধারণা এ দুই পেশার লোক ছাড়া অন্য কেউ লেখক হতে পারে না। এরা আবার বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। তারা ছাপে অন্য পেশার কন্ট্রাকটরের শালার বউয়ের ছোট ভাইদের কবিতার বই।
সুবিধা পেলে সাহিত্য সুদ্ধ পাইকারি বিক্রি করতেও তাদের বাধবে না। এইরকম একটা গুমোট হত্যাচক্রের ভেতর কখনোই মহৎ কবি সাহিত্যিক জন্মগ্রহণ করতে পারে বলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।
২৯ টি মন্তব্য/প্রতিক্রিয়া এসেছে এ পর্যন্ত:
আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে নিচের মন্তব্য-ফর্ম ব্যবহার করুন, অথবা, লগ-ইন করা অবস্থায় মন্তব্য করুন:
* ভাষা: মন্তব্যের ভাষা হওয়া উচিত (মূলত) বাংলা — অবশ্যই বাংলা হরফে। আর ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়।
** মডারেশন: মন্তব্যের ক্ষেত্রে এখানে প্রাক-অনুমোদন মডারেশনের চর্চা নেই। তবে যে-সব কারণ উপস্থিত থাকলে প্রকাশিত মন্তব্য বিনা নোটিশে (এবং কোনো ধরণের কারণ-দর্শানো ছাড়াই) পুরোপুরি মুছে দেয়ার বা আংশিক সম্পাদনা করার অধিকার "মুক্তাঙ্গন" সংরক্ষণ করে, সেগুলো হলো: (ক) সাধু এবং চলিত রীতির সংমিশ্রণ; (খ) ত্রুটিপূর্ণ বানানের আধিক্য; (গ) ভাষার দুর্বল, আঞ্চলিক, অগ্রহণযোগ্য বা ছাপার অযোগ্য প্রয়োগ; (ঘ) ব্যক্তিগত আক্রমণ প্রবণতা, ছিদ্রান্বেষণ ও কলহপ্রিয়তা; (ঙ) অপ্রাসঙ্গিকতা ও বক্তব্যহীনতা। এ ব্যাপারে মডারেশন টিমের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। তাই, চূড়ান্তভাবে পেশ করার আগে "প্রাকবীক্ষণ"-এর মাধ্যমে নিজ-মন্তব্যের প্রকাশিতব্য রূপ যাচাই করে নিন।
==নিবন্ধিত লেখকদের প্রতি==
লেখকের নিজস্ব পাতার প্রকাশিত কাজের তালিকায় আপনার পেশ করা মন্তব্যের নির্ভুল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে 'লগ-ইন' করা অবস্থায় মন্তব্য করুন।
==প্রকাশিত বক্তব্যের/মতামতের দায়ভার==
পোস্ট কিংবা মন্তব্যে প্রকাশিত বক্তব্য কোন অবস্থাতেই মুক্তাঙ্গন ব্লগের নিজস্ব মতামতের বা অবস্থানের পরিচায়ক নয়। বক্তব্যের দায়ভার লেখক এবং মন্তব্যকারীর নিজের। শুধুমাত্র "মুক্তাঙ্গন" নামের আওতায় প্রকাশিত বক্তব্যই ব্লগের সামষ্টিক অবস্থানকে নির্দেশ করবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আপনার এই ক্ষেদোক্তির সাথে সহমত পোষন করতেই হচ্ছে। শামসুর রাহমান সম্পর্কে ইতিপূর্বে এই ব্লগের শুরুর দিকে আরো কিছু বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। এখানে এবং এখানে দেখুন। এ বিষয়ে আপনার আরো শাণিত আলোচনার অপেক্ষায় থাকলাম। আপনাকে অভিনন্দন।
[মন্তব্য-লিন্ক]
১
সত্যিই তো, আবার ফিরে পড়ার মতো বই আমাদের খুব বেশি নেই। আপনার বিবেচনায় কোন বইগুলো সংরক্ষণযোগ্য তা জানালে উপকৃত হব। ‘দেশীয় সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় সমূহ’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা সামান্যই, কিন্তু এ বন্ধ্যা (?) সময়ে আমাদের হাতে-গোনা ভালো বইগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আরো বেশি জরুরি।
২
‘শিশুসাহিত্য’ অভিধায় নিশ্চয়ই অপরিণত সাহিত্যকেই চিহ্নিত করতে চাইছেন এখানে? ভারতের মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য অঞ্চলের ‘দলিত সাহিত্য’-র কথা অল্পস্বল্প জানি, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দলিত গোষ্ঠীর সদস্য কারা? এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে সবিস্তারে জানতে আগ্রহী।
[মন্তব্য-লিন্ক]
দেশীয় সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় সমূহ’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা সামান্যই, কিন্তু এ বন্ধ্যা (?) সময়ে আমাদের হাতে-গোনা ভালো বইগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা আরো বেশি জরুরি।
প্রায় সহমত। শুধু এসব নিয়ে আলোচনা করলেই কি সমাধান হবে বলে মনে হয় স্যার? বুদ্ধদেবের কবিতা বা সুধীনের পরিচয়ের মতো একটা পত্রিকা কই। নতুন লেখকদের আলোবাতাসে বেড়ে ওঠার ব্যবস্থা করবার। যেখানে আত্মবিশ্বাসী তরুণরা দ্বিধাহীনভাবে তাদের আত্মবিশ্বাসের পরীক্ষা দিতে পারে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উর্ধ্বে ওঠে। এবং যোগাযোগহীন মুল্যায়নে মুল্যায়িত করবার সম্পাদক কই।
আর প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনামোঘলদের বাইরে ছোটকাগজ কেন্দ্রিক যে সাহিত্যর বিকাশ তাকে আমি দলিত সাহিত্য বলেছি।
[মন্তব্য-লিন্ক]
ধন্যবাদ, জাহেদ সরওয়ার। গুটি কয় ভালো বই নিয়ে আলোচনা করেই ‘দেশীয় সাহিত্য বিকাশের অন্তরায় সমূহ’ দূর করা যাবে না – ঠিক। ভালো সাময়িকপত্র নেই, নেই তেমন মান্য সম্পাদক – সে-কথাও স্বীকার করি। এসব বিষয়ে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। আপনার ‘বিচার’ সুবিচার কি না, কিংবা ছোটকাগজ কেন্দ্রিক সাহিত্যের ‘দলিত সাহিত্য’ অভিধা কতটা যথার্থ – সে-প্রশ্নও তুলছি না। কেবল আবারও জানতে চাইছি আপনার পছন্দের বইগুলোর নাম। আমি নিশ্চিত, সে-তালিকা আমার (এবং হয়তো আরো অনেকেরই) কাজে আসবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে জনমানসের ভিতর যে প্রগতিশীল দ্রোহের বিস্তার হতে থাকে, বামপন্থী নানান সংগঠনের বিস্তার ঘটতে থাকে, স্বাধীনতার পরবর্তীকালের নানান অপশাসনের প্রতিবাদমুখর হয়; তাঁরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন_ তার সবকিছুকে এভাবে অস্বীকার করা কি যুক্তিযুক্ত হয়? বুর্জোয়া শাসনের এই যুগে সব আলোকিত মানুষকে কি দেখা যায়? কর্পোরেট পুঁজির এই কালে নানান চটকদার মিডিয়া কি তাদের স্বার্থ আর রূপ-রসের বাইরে যায়? মগজে স্বার্থের কারফিউ জারি রাখলে প্রকৃত সত্যকে কিভাবে চেনা যাবে!
লিটল ম্যাগাজিনের লোকজন সর্ম্পকে এত সরল মন্তব্য করা যায়? তা হলে এদের সবাই স্বমেহী? বাংলাদেশে এমন সাহিত্যিকও আছেন যিনি তার সামগ্রিক জীবনে তার বিবেচনার প্রতিষ্ঠানমুখর কাগজে একটা অক্ষরও লেখেননি। আবার অনেকের কাছে ছোটকাগজ এমনই এক লড়াই-সংগ্রাম যে তারা কখনো এর সাথে আপস করেন না।
এই বিষয়টাও ঠিক বুঝলাম না_ শামসুর কেন রুচিহীন ট্রাডিশনাল লোক হলেন। এটা আমাদের জন্য ভালো হতো জাহেদ সারোয়ার রুচি আর ট্রাডিশন বলতে কোন্ কোন্ শর্তসমূহকে বোঝাচ্ছেন তা ক্লিয়ার করলে ভালো হতো। তিনি রবার্ট ফ্রস্টের কবিতার এত বাজে অনুবাদ করে থাকলে তা উদাহরণসহ জানালে আমাদের জন্য আরও ভালো হতো।
তাকে এভাবে ভণ্ডপীর বলাটা কি সঠিক হলো? আল মাহমুদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ইতিহাস অবশ্যই আপত্তিজনক। কিন্তু আমরা কি একই সাথে সোনালী কাবিন-এর চমৎকার সনেটের কথা, মাটিঘেঁষা কাব্যিক আবহ, জলবেশ্যা বা পানকৌড়ির রক্ত-এর মতো গল্পসমূহে যৌনতার চমৎকার শৈল্পিক প্রকাশকে স্মরণ করব না?
জাহেদ সারোয়ারের লেখাটিও দরকারি, তবে তাঁর ঢালাই মন্তব্যকে তাঁর ঠিক তার মতো করে গ্রহণ করা গেল না। তবে তাঁর লেখায় প্রচুর দরকারি তথ্য আছে, সাহিত্যের প্রতি অনুরাগও আছে। তাঁকে ধন্যবাদ।
[মন্তব্য-লিন্ক]
সরি, জাহেদ সরওয়ার-এর নামটি সঠিক লিখিনি।
[মন্তব্য-লিন্ক]
মুক্তিযুদ্ধের ভিতর দিয়ে জনমানসের ভিতর যে প্রগতিশীল দ্রোহের বিস্তার হতে থাকে, বামপন্থী নানান সংগঠনের বিস্তার ঘটতে থাকে, স্বাধীনতার পরবর্তীকালের নানান অপশাসনের প্রতিবাদমুখর হয়; তারা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন_ তার সবকিছুকে এভাবে অস্বীকার করা কি যুক্তিযুক্ত হয়?
জাহাঙ্গীর ভাইকে ধন্যবাদ
তাঁর লেখনীর অসাধারণ মেজাজের জন্য । প্রথমেই বলে নিই এই লেখাটা আমাদেরই জাতীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে। সে ক্ষেত্রে আত্মসমালোচনাই বলা যায়। প্রক্রিয়াগত কী কী ক্ষতের কারণে আমাদের সৃষ্টি যা হতে পারত তা হলোনা অথবা হচ্ছে না সেটার শারীরিক দর্পনের প্রতিচ্ছবিগত অনুসন্ধানই এলেখার উদ্দেশ্য। আমাদের জাতীয় সংকটে জনতার যে অংশগ্রহণ তাকে আমি এপিক ওয়ার বলেছি। এটা কেবল গণ-অংশগ্রহণকে শ্রদ্ধা করার মানসে। কিন্তু আপনি জানেন অধিকাংশ জনতা স্রোতের মতো। পঙ্গপালের মতো। তাদের মুক-ক্ষোভের ভেতর জাগরণের বীজ বহন করবার জন্য বারূদের দরকার পড়ে সবসময়। সে ক্ষেত্রে আমরা সংকটকালীন জাতীয় স্তরের নেতৃত্বকেই সে বারূদ হিসাবে বা বারূদ বাহক হিসাবে চিহ্নিত করে থাকি। এ ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি মানুষেরই অভাবকে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বুর্জোয়া শাসনের এই যুগে সব আলোকিত মানুষকে কি দেখা যায়?
কর্পোরেট পুঁজির এই কালে নানান চটকদার মিডিয়া কি তাদের স্বার্থ আর রূপ-রসের বাইরে যায়?
আলোকিত মানুষতো তাকেই বলবো যে মনন আর মেধাকে একত্রিত করেছে। তাকে, তার প্রজ্জ্বলনকে রুখবে কে? এই সমস্ত আলোকিত মানুষরাও আবার দুই ধরনের হতে পারে রাজনৈতিক এবং তাত্ত্বিক। কোনো ক্ষেত্রেই কি আমরা জাতীয় জীবনে সেই ব্যক্তি মানুষের দেখা পেয়েছি? একজন ওয়াদি সাইদ, একজন কাব্রাল, একজন গ্রামসি অথবা একজন ফানোন কই আমাদের। দেখা যায় যার তত্ত্ব আছে তার তত্ত্বের সাথে কাজের মিল নাই। যার কাজ আছে তার তত্ত্ব নাই। ফলে তত্ত্বটাও বেশীদিন টিকেনা আর কাজতো না-ই।
মগজে স্বার্থের কারফিউ জারি রাখলে প্রকৃত সত্যকে কিভাবে চেনা যাবে?
যেহেতু সাহিত্যক্ষেত্র ছাড়া অধমের রুচি নাই। চিন্তা ও লেখা ছাড়া ভাত নাই। তাইতো এই গোস্বা রসের বিচার দাবি। নিজের অজান্তেই নিজে স্বার্থ বয়ে বেড়াচ্ছি নাকি?
শুধু উপরোক্ত লাইনটা আমি জাহাঙ্গীর ভাইক অনুরোধ করবো পুণর্বার নাদানকে বুঝিয়ে দেবার।
লিটলম্যাগাজিন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘ এরপর থেকে এদেশে’র পর একটা ‘বেশিরভাগ’ শব্দ ছিল। বিজয়/সুতনিতে লেখা-লেখাটায় শব্দটা এখনো আছে। হয়তো কনভার্ট জনিত জটিলতার কারণে শব্দটা খোয়া গেছে নয়তো ব্লগে প্রকাশ সংক্রান্ত জটিলতায় খোয়া গেছে। এ ধারণা করি এ জন্য যে বুর্জোয়াদের বমি বর্ধক আরো দুএকটা শব্দ সম্পাদনাজনিত কারণেই সম্ভবত বাদ গেছে। যাইহোক ছোটকাগজ সম্পর্কে আপনার সাথে আমার লেখার বিরোধ নাই। কিন্তু সেই একজন সম্পাদক যে উদাহরণ হতে পারেনা তাতো আপনি জানেন। এবং তারা এলেখার আক্রমনের লক্ষ্য নয়। প্রচলিত স্বভাবটাই আক্রমনের লক্ষ্য।
শামসুর রাহমান সম্পর্কে
আজেবাজে কবিতা যেমন আছে তেমনি কিছু ভাল কবিতা যে তাঁর নেই তা নয়। সেসব নিয়ে গুনীরা অনেক লিখেছেন। আমি নিজেও শামসুর রাহমানের দ্বারা সুবিধাপ্রাপ্ত । তাঁর একটা কথাতেই আমার একবার চাকরী হয়ে গিয়েছিল একটা পত্রিকায়। যদিও বেশিদিন সেখানে কাজ করা যায়নি। আমি আবার বলছি এ লেখা চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিয়েই । যেই পত্রিকা থেকেই যাচ্ছে একটা ঝড়ের কবিতার জন্য তাকে লিখে দিচ্ছেন, যে যাচ্ছে রৌদ্রের কবিতার জন্য তাকে লিখে দিচ্ছেন, এভাবে বসন্ত হেমন্ত দুপুরের আর রাতের কবিতা ট্রাডিশনাল কবি ছাড়া আর কে লিখতে পারে। কিছুতেই কোনো অরূচি নাই সে ক্ষেত্রে লেখাটার লাইন বদলে লিখতে হবে তিনি খুব রূচিবান লোক ছিলেন।
আমি জানিনা রাহমান অনুদিত ফ্রস্টের কবিতা নামে বইটা আপনার নজর কেড়েছে কিনা। সে ক্ষেত্রে অনলাইনে ফ্রস্টের প্রায় সব বই-ই পাওয়া যায়। মিলিয়ে পড়ে নিতে অনুরোধ করি।
দীর্ঘ আলোচনার জন্য জাহাঙ্গীর ভাইকে আবার শুভেচ্ছা জানাই। ভাল থাকুন।
[মন্তব্য-লিন্ক]
পাঠক হিসেবে আমি খুবই নিম্নমানের, মাতৃভাষাতেই দক্ষতা নেই, অন্য ভাষায় তো আরও নেই। যা পড়েছি মোটামুটি বাংলাতেই। তাই বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের ১৫টাও বার বার পড়ার মতো বই নেই, এই কথাটা একেবারেই মানতে পারছি না।
যে-প্রসঙ্গ এখানে উঠানো হয়েছে, দেশীয় সাহিত্য বিকাশের অন্তরায়, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বলাই বাহুল্য, বিষয়টি নিয়ে এখানে তেমন কিছুই লেখা হয়নি। হুমায়ুন আজাদীয় ভঙ্গিতে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। সাধারণীকরণের প্রবণতা এ লেখাতে এত প্রকট যে, কারও কাছে মনে হতে পারে শামসুর রাহমান, কবির চৌধুরী, কয়েকজন প্রকাশক আর দৈনিকের সাহিত্য পাতাগুলিই বোধহয় এখানকার সাহিত্য বিকাশের প্রতিবন্ধক।
কবি সমর সেনের মনে হয়েছিল, তাঁর কবিতায় পুনরাবৃত্তি আসছে, তাই তিনি কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন, বাকি জীবন একটি পত্রিকা সম্পাদনা করে গেছেন। আবার শামসুর রাহমানদের মতো অনেক কবি আছেন, যারা মনে করেছেন, সারা জীবন সৃজনশীল থাকার সংগ্রাম করে যাবেন। এবং এ কারণে তাঁর লেখায় পুনরাবৃত্তি এসেছে। কিন্তু তাই বলে তাঁকে সাহিত্য-শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে কথা বলার সুযোগ নেই। হুমায়ুন আজাদের কবিতার মান বলে দেয়, কেবল কবিতা লিখলে তিনিও একই বৃত্তে ঘুরপাক খেতেন। কিন্তু তিনিও সৃজনশীল থাকতে চেয়েছেন, তাই অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিচরণ করেছেন। যদিও তাঁর সৃজনশীল লেখার জন্যে নয়, অধিকাংশ সময় বালখিল্য কিছু সাক্ষাৎকারের জন্যেই বেশির ভাগ পাঠক মুগ্ধ বনে গেছেন। জীবনানন্দকে এক শ্রেণীর পাঠক গ্রহণ করেছেন বিচ্ছিন্নতাবোধ জাড়িত সাহিত্যের জন্যে, আবার আরেক শ্রেণীর পাঠক গ্রহণ করেছেন রূপসী বাংলার জন্যে। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে উচ্চকিত তাদের সৃজনশীলতা।
আর অপাঠ্য কাকে বলব? আখতারুজ্জামান ইলিয়াস চটিসাহিত্য থেকে শুরু করে অনেক কিছুই পড়তেন। নিশ্চয়ই তিনিও পড়ার পর অনেক কিছু নাকচ করে দিয়েছেন, তাই বলে এরকম অবজ্ঞা করেছেন বলে জানা যায় না।
লেখাটিতেই দেখতে পাচ্ছি,
এই গুটিকয় সাহিত্যিক কারা? তা হলে আমরা ধারণা পেতাম, কোন সাহিত্যিকরা দেশীয় সাহিত্যকে বিকশিত করেছেন বলে জাহেদ সরওয়ার মনে করেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের বৃঝতে সুবিধা হতো, দেশীয় সাহিত্য কোন লেখনরীতিতে, কোন লেখকের কোন জীবনপদ্ধতিতে বিকশিত হওয়ার দুয়ার খুলেছে।
একাত্তরের সাহিত্য সম্পর্কেও এখানকার বক্তব্য মানতে পারছি না।
তবে সঠিকভাবেই বলা হয়েছে, আমাদের প্রচুর মানসম্মত অনুবাদ দরকার। তবে অনুবাদের ধারণাও বোধকরি পাল্টাচ্ছে। এখন অনেক প্রকাশকই মূল লেখকের নামের সঙ্গে ভিন্নভাষার লেখকটির নামই প্রকাশ করেন, অনুবাদক হিসেবে নয়, লেখক হিসেবেই। বোধকরি এ কারণে, কোনও লেখাই সঠিকভাবে অনুবাদ হয় না।
[মন্তব্য-লিন্ক]
প্রিয় অবিশ্রুত
শুভেচ্ছা জানবেন। প্রথমেই বলে নেই মুখোশের ব্যাপারে আমার চুলকানি আছে। কারণ মুখোশ আততায়ীদের দরকার হয় বেশী। ছদ্মনামধারী কারো মন্তব্যে সাধারণত প্রতিমন্তব্য করতে সাধ হয় না। মুখোশের আড়ালে আমি কি আমার পিতার সাথে কথা বলছি না বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলছি বুঝতে পারিনা। কারণ পরিচিতি আর ব্যক্তিভেদে মানুষের আচরণ বদলায়।
যে-প্রসঙ্গ এখানে উঠানো হয়েছে, দেশীয় সাহিত্য বিকাশের অন্তরায়, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বলাই বাহুল্য, বিষয়টি নিয়ে এখানে তেমন কিছুই লেখা হয়নি। হুমায়ুন আজাদীয় ভঙ্গিতে কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছে মাত্র। সাধারণীকরণের প্রবণতা এ লেখাতে এত প্রকট যে, কারও কাছে মনে হতে পারে শামসুর রাহমান, কবির চৌধুরী, কয়েকজন প্রকাশক আর দৈনিকের সাহিত্য পাতাগুলিই বোধহয় এখানকার সাহিত্য বিকাশের প্রতিবন্ধক।
আপনার এমন্তব্যও আমার কাছে গুরুত্ববহ হতে পারতো আপনি যদি লেখাটা ভাল করে পড়তেন এবং পড়লেও বুঝার চেষ্টা করতেন। এখানে সাদা চোখে যে সব প্রক্রিয়া চোখে পড়েছে যে গুলোর সমালোচনা করবার মতি হয়েছে। পুরা লেখাটাই সমস্যার মেটাফর মাত্র। আর নামসমূহ সিম্বল। বলা হচ্ছে যে দেশীয় অধিকাংশ সাহিত্যসেবীগণের চারিত্রিক বৈশিষ্টই এই এই ধরণের। এবার আপনি বের করুন সমস্যাগুলো কি কি।
রাহমান অধিক লিখে পুনরাবৃত্তি করেছেন কিনা সেটা আমার আলোচ্য বিষয় নয়। রাহমানকে কেন রুচিহীন ও ট্রাডিশনাল লোক বলেছি সেটা কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের প্রতি মন্তব্যে লক্ষ্য করুন।
হুমায়ূন আজাদকে জড়িয়ে যে সমস্ত বাক্য তৈরী করেছেন সম্ভবত আগের লেখাটা হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে লিখিত হবার কারণে। হুমায়ূন আজাদের সাথে এ লেখার কোনো যোগ বিয়োগ নাই। হুমায়ূন আজাদ তার বালখিল্য সাক্ষাৎকারের জন্য না সৃজনশীল সাহিত্যের জন্য বিখ্যাত তা এলেখার বিষয় বা উদ্দেশ্য কোনোটাই নয়।
একাত্তরের সাহিত্য সম্পর্কেও এখানকার বক্তব্য মানতে পারছি না।
হয়তো আমার চোখে পড়েনি। আপনার দিকনির্দেশনা কাম্য। কেন মানতে পারছেন না। অথবা এ বিষয় নিয়ে কি কি গুরুত্বপুর্ণ বই লেখা হয়েছে তা জানতে চাই।
আপনাকে শুভেচ্ছা।
[মন্তব্য-লিন্ক]
@ জাহেদ সরওয়ার,
‘অবিশ্রুত’ ছদ্মনামকে আদৌ ‘মুখোশ’ বলা যায় কি না সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ আছে। ব্লগমন্ডলে যারা ছদ্মনামে লেখেন, বিশেষত অবিশ্রুত’র মতো রাজনৈতিক কলামিস্টগণ, কেন তারা তা করেন, কিংবা কি তার যৌক্তিকতা, সে আলোচনায় এখন যাচ্ছি না। তাই শব্দ চয়নে (‘মুখোশ’, ‘চুলকানি’ ইত্যাদি) আপনাকে আরেকটু সতর্ক হতে অনুরোধ করবো।
আর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে বাবা, ভাই, শিক্ষক বা বন্ধুর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন লাইনে/ভঙ্গিতে কথা বলার বিষয়টা সমর্থন করতে পারি না। কোন কিছু যখন ছাপার অক্ষরে যায় (পোস্ট এবং মন্তব্য উভয়ের ক্ষেত্রেই), তা গোটা দুনিয়ার জন্যই যায়। তাই এখানে সার্বজনীন প্রকাশভঙ্গী জরুরী। এসব পরিস্থিতিতে যে ভঙ্গীতে নিজের শিক্ষক-বাবা-ভাইয়ের সাথে কথা বলা যায় না, সে ভঙ্গীতে অবিশ্রুত কিংবা অন্য কারও সাথেও কথা বলা যায় না। এখানে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি-সম্পর্ক দ্বারা প্রভাবিত subjectivity যত কম থাকে তত মঙ্গল। যত দূর বুঝি, ঠিক একারণেই মুক্তাঙ্গন মডারেটররা লেখকদের শব্দ চয়ন এবং ভাষার ব্যবহারের বিষয়টিতে এতো জোর দিয়ে থাকেন।
অবিশ্রুত আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন করেছেন। যেমন, তিনি জানতে চেয়েছেন: “এই গুটিকয় সাহিত্যিক কারা? তা হলে আমরা ধারণা পেতাম, কোন সাহিত্যিকরা দেশীয় সাহিত্যকে বিকশিত করেছেন বলে জাহেদ সরওয়ার মনে করেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের বুঝতে সুবিধা হতো, দেশীয় সাহিত্য কোন লেখনরীতিতে, কোন লেখকের কোন জীবনপদ্ধতিতে বিকশিত হওয়ার দুয়ার খুলেছে।”
প্রশ্নটি আপনাকেই করা, কারণ, মূল পোস্টটি আপনার। সুতরাং, এর উত্তর আপনারই দেয়া দরকার। সেই ব্যাখ্যার অনুপস্থিতিতে আপনার এই পুরো লেখার basic premise-টাই ধরতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে, মাফ করবেন!
[মন্তব্য-লিন্ক]
‘অবিশ্রুত’ ছদ্মনামকে আদৌ ‘মুখোশ’ বলা যায় কি না সে বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ আছে। ব্লগমন্ডলে যারা ছদ্মনামে লেখেন, বিশেষত অবিশ্রুত’র মতো রাজনৈতিক কলামিস্টগণ, কেন তারা তা করেন, কিংবা কি তার যৌক্তিকতা, সে আলোচনায় এখন যাচ্ছি না। তাই শব্দ চয়নে (’মুখোশ’, ‘চুলকানি’ ইত্যাদি) আপনাকে আরেকটু সতর্ক হতে অনুরোধ করবো।
রায়হান রশীদ সাহেবের এই কথাটা মানতে পারলাম না। ব্লগমন্ডলে যারা ছদ্মনামে লেখে তারা সবাইকি রাজনৈতিক কলামিস্ট! আমারতো ধারনা ছিল অন্যরকম। ফাজলামো করার জন্যই অধিকাংশ লোকজন ছদ্মনাম গ্রহণ করে। এবং এর প্রমাণও আছে ভুরিভুরি। একজন স্পষ্টবাদি রাজনৈতিক বক্তা নিজের নাম গোপন করে নাকি।
কী কী শব্দ মুক্তাঙ্গনে ব্যবহার করা যাবেনা তার একটা সূচী অথবা মুক্তাঙ্গন ভাষা ব্যবহারের নিয়মাবলী নামে একটা ব্যাকরণ করলে সবচাইতে ভাল হয়। যেটা প্রথম আলো, নয়া দিগন্ত অথবা অন্যান্য পত্রিকা করছে। রায়হান সাহেবের কথা বলার আভাসে মনে হল মুক্তাঙ্গন বুর্জোয়াদের ড্রয়িংরুম। মুখোশ আর চুলকানি এতো জীবনের অপরিহার্য ব্যবহার্য শব্দ এ গুলো ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে কেন? তাও বুঝা গেল না।
প্রশ্নটি আপনাকেই করা, কারণ, মূল পোস্টটি আপনার। সুতরাং, এর উত্তর আপনারই দেয়া দরকার। সেই ব্যাখ্যার অনুপস্থিতিতে আপনার এই পুরো লেখার basic premise-টাই ধরতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে, মাফ করবেন!
কেন লেখককে তার বক্তব্যের প্রতিটি লাইন ব্যখ্যা করতে হবে। জাহেদ সারোয়ারের লেখাটা সম্পূর্ণ পড়ে বুঝতে তো কোনো অসুবিধা হলোনা। তিনি অনেকটা প্রতীকের মতোই কতিপয় লেখকের নাম ব্যবহার করেছেন মনে হলো। বাংলাদেশী সাহিত্য জগতের এ সমস্যতো সবারই কমবেশী জানা। বললেই ধারণা করা যায় লেখক আসলে কার কার কথা বলতে চাইছেন। আর মন্তব্যগুলো পড়ে মনে হল জাহেদ সারোয়অর অবিশ্রুতকেই প্রতিমন্তব্য করেছেন। সেখানে আগবাড়িয়ে রায়হান রশীদ কেন ব্যাপারটা নিয়ে জলঘোলা করতে নামলো বুঝা গেল না। রায়হান রশীদ নিজেই অবিশ্রুত হলে অবশ্য ব্যাপারটা মেনে নেয়ে যেতে পারে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
প্রিয় জাহেদ সরওয়ার
যতদূর মনে পড়ছে, আপনার লেখায় এর আগেও দু’একবার পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখেছি। ছদ্দনামের কারও মন্তব্যে আপনার প্রতিমন্তব্যে অরুচির কথা জানলে নিশ্চয়ই আপনার ‘চুলকানী’ জাগ্রত করার পথে পা বাড়াতাম না। কে না জানে, চুলকানী জিনিসটা তাৎক্ষণিকভাবে যত সুখকরই হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত তা মোটেও ভাল নয়, বিশেষত জনসমক্ষে তো শুরু থেকেই বিপত্তিকর। যাই হোক, আশা রাখি, মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য যা-ই বিনিময় হোক না কেন, সে-সবই আমাদের লেখা বা লেখাজাত বিষয় নিয়ে; নিশ্চয়ই এমন কোনও দিন আসবে, যখন আমরা ইন্টারনেট নামক মুখোশটা দূরে সরিয়ে মুখোমুখি আমাদের মত বিনিময় করতে পারব।
আপাতত আমি আপনাকে এ টুকু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনার কোনও লেখায় ভবিষ্যতে আর কোনও মন্তব্য করে আপনার চুলকানী সৃষ্টি করতে যাব না।
তবে যা না বললেই নয়,- আপনার এ লেখা হয়তো সত্যিই সমস্যার মেটাফোর। তবে সিম্বলগুলি আরও যথাযথ হলে আমরা হয়তো সমস্যা খুঁজতে আরও প্রাণিত হতাম। আর সে-কারণেই ‘গুটি কয় সাহিত্যিকের’ নাম জানতে চেয়েছিলাম।
হুমায়ুন আজাদ, আমারও একজন প্রিয় লেখকমানুষ, তাঁর ভঙ্গিটিও প্রিয়; তিনি যখন গভীরতা নিয়ে কথা বলেন, তখন আরও প্রিয় হয়ে ওঠেন। আপনার এ লেখায় তাঁর ভঙ্গিটি খুজেঁ পাওয়াটাকে নেতিবাচক ভাবে নেবেন না, আশা করি। একজন মানুষ যখন লেখেন, কখনও অন্য কারও প্রভাব হয়তো সাময়িকভাবে তাঁর ওপর কাজ করতে পারে; দিনে দিনে তিনি হয়তো তা কাটিয়ে উঠে নিজের একটি ভাষাভঙ্গি তৈরি করে নেন; এ নিয়ে কুণ্ঠিত হওয়ার কিছু নেই। হয়তো আমার ওপরও কারও প্রভাব আছে, তা আমি ধরতে পারি না, কিন্তু হয়তো পাঠকের কাছে তা স্পষ্টভাবে ধরা পড়তে পারে। আপনার আগের লেখার সূত্রে আমি এ মন্তব্য করিনি, নিশ্চিত থাকবেন।
রাহমান অধিক লিখে পুনরাবৃত্তি করেছেন কি না তা আপনার লেখার বিষয় ছিল না, কিন্তু পুনরাবৃত্তি যেহেতু যে-কোনও সাহিত্য বিকাশেরই অন্তরায়, সেহেতু প্রসঙ্গটি উত্থাপিত হওয়ায় মন্তব্যের খাতা দুর্বল হয়েছে কি-না তা বিচারের ভার আপনার উপরই ছেড়ে দিলাম।
একাত্তরের সাহিত্য নিয়ে যা মন্তব্য, তা-ও একান্তই আমার; আপনার সঙ্গে তার দূরত্ব থাকা খুবই স্বাভাবিক। সাহিত্য তো কেবল গল্প-উপন্যাস-কবিতা নয়। উপন্যাসের বিচারে অবশ্য একাত্তরের সাহিত্য আমার কাছেও ভয়ানক দুর্বল। তবে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা এবং রাজনৈতিক সাহিত্য মিলিয়ে তার একটি প্রকৃতি দাঁড়িয়ে গেছে বলেই আমার বিশ্বাস। এসবের মধ্যে উল্লেখিত অব: সামরিক কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথার অংশটির সাহিত্য-মূল্য এমনকি লেখার উদ্দেশ্যও নিশ্চয়ই প্রশ্নসাপেক্ষ, কিন্তু গবেষকদের কাছে এসব স্মৃতিকথাগুলিও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-বিরোধগুলি চিহ্নিত করার বিশাল আকর হিসেবে বিবেচিত হবে বলেই আমার মনে হয়। যেমন, পর্যটক ও খ্রিস্টান মিশনারীদের দুর্বল রোজনামচাগুলির উপর ভিত্তি করে পরবর্তী-সময়ে কোনও কোনও গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস-সাহিত্য (পক্ষে-বিপক্ষে) রচিত হয়েছে, তেমনি এগুলিও নিশ্চয়ই কাজ দেবে।
যাই হোক, আপনার চুলকানি আর বাড়াতে চাই না। শুভেচ্ছা জানবেন।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আপাতত আমি আপনাকে এ টুকু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনার কোনও লেখায় ভবিষ্যতে আর কোনও মন্তব্য করে আপনার চুলকানী সৃষ্টি করতে যাব না।
ভাই অবিশ্রুত শুভেচ্ছা জানবেন।
আমার কোনো আচরণ আপনার মনে ব্যক্তিগতভাবে বেদনার উদ্রেক করে থাকলে আমি তার নিরসন কামনা করি।
কেননা আমি ব্যক্তিকে আঘাত করার বাসনায় আলোচিত শব্দদুটি ব্যবহার করি নাই। বাংলা ব্লগের শুরু থেকেই আমি সেখানে টুকটাক লেখালেখি মন্তব্য অথবা অবসর সময় ক্ষেপনের লক্ষ্যে চোখ রাখি।
এরপর আরো যতগুলো ব্লগ বাংলায় হয়েছে সবগুলোতেই মনে হয় আমার একাউন্ট আছে। যদিও সবগুলোতে সেভাবে সক্রিয় না। আপনি নিজেও অবগত আছেন ব্লগগুলোর চরিত্র এখন কোন পর্যায়ে। একেক জন একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করে যা তা লিখে এবং যা তা মন্তব্য করে এমন এক দায় ও দায়িত্বহীন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে ওখানে এখন কোনো সিরিয়াস লেখা লেখার কল্পনাও করা যায় না।
বন্ধুবর ফারুক ওয়াসিফের মাধ্যমে আমি প্রথম নির্মাণ সম্পর্কে অবগত হই। এরপর নিয়মিত নির্মাণ পড়ে এই সিদ্ধান্ত করি যে না নির্মাণ সিরিয়াস লেখার একটা জায়গা হতে পারে।
মুক্তাঙ্গনকে সেরকম গড়পড়তা ব্লগ আমি মনে করিনা। সুমনের সাথে সাক্ষাতেও বলেছিলাম যে ছদ্মনাম পরিহার করা যায় কিনা ভেবে দেখতে। যেহেতু মুক্তাঙ্গন সমাজ,সাহিত্য, রাস্ট্র ও সাম্রাজ্যবাদি নৈরাজ্যের সকল অনাচার সম্পর্কে সজাগ এবং মুক্তাঙ্গনের লেখক মণ্ডলীর মধ্যেও যতেষ্ট কমিটমেন্ট, প্রজ্ঞা ও সহনশীলতা বিরাজমান। আর অধমের প্রথম আগ্রহ যখন সাহিত্য তাই এই ধরণের লেখা প্রচারের সাহস। আমার বাসনা ছিল যা আমি ধরতে পারিনাই তা সহমর্মীরা ধরিয়ে দেবেন।
ব্যক্তিগত আক্রমন কিংবা কারো কুৎসা রটনা লেখার উদ্দেশ্য নয়।
অনুপুঙ্খভাবে বলতে গেলে এটা কোনো নিখুত লেখাও নয়। যেহেতু সিরিয়াস লেখা নিয়েই মুক্তাঙ্গনের এই দোকান।
মুক্তাঙ্গনের এই লেখা যে শুধু যারা এখানে লেখে তারা পড়ে তা তো না। অনেক বন্ধুদের কেও আমরা বলি দেখ লেখাটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তুমিও অংশ নিতে পারো। সে ক্ষেত্রে অনেক কেই দেখেছি ছদ্মনাম দেখে নাক সিটকাতে। কারণ একটা সিরিয়াস বিষয়ে আমি কথা বলছি অথচ একজন ছদ্মনাম ধারী অথবা মুখোশ পরিহিত লেখকের সাথে। ব্যপারটার গুরুত্ব আপনি নিজেও ভেব দেখেবেন আশা করি।
আর যত্রতত্র আমরা এলার্জি শব্দটা ব্যবহার করি অথচ বাংলা শব্দ চুলকানির কি দোষ বুঝলাম না।
[মন্তব্য-লিন্ক]
জাহেদ সরওয়ারকে শুভেচ্ছা।
উপরের উদ্ধৃতিতে সংবাদপত্রের সামাজিক-রাজনৈতিক বদমাইশিকেই বোঝাতে চাইছি।
স্বাধীনতা সংগ্রামের পর উল্লেখযোগ্য চরিত্র হিসাবে উল্লেখ করতে চাই কর্নেল তাহের, সিরাজ শিকদার, তাজউদ্দীন আহমদ-এর নাম।
সাহিত্যের ক্ষেত্রে ইলিয়াস, সাইদ আতিকুল্লাহ (গল্প, কবিতা উভয় ক্ষেত্রে), আবুল হাসান, রুদ্র, শহিদুল জহির, মামুন হুসাইন, সেলিম মোরশেদ, মাসুদ খান, মজনু শাহ, মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখের নাম।
আর স্বাধীনতার পর ১৫টি ভালো বইও আমরা পাইনি? আমাদের শিল্প-সাহিত্যেকে এত খাটো বোধ হয় করা যায় না।
[মন্তব্য-লিন্ক]
আমার লেখাটিতে সাহিত্যিক হিসাব আরও কিছু নাম যোগ করতে চাই, (সকালবেলা অফিসের যাওয়ার তাড়াহুড়ার দরুন কিছু নাম বাদ পড়ে গেছে) তারা হচ্ছেন : আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর, হুমায়ুন আজাদ, হরিপদ দত্ত, আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লা খান, ফারুক ওয়াসিফ, ইমতিয়ার শামীম, কাজল শাহনেওয়াজ।
রাজনীতির ক্ষেত্রে আরও দু’জনের নাম বলতে চাই, তারা হচ্ছেন : বদরুদ্দীন উমর, টিপু বিশ্বাস।
[মন্তব্য-লিন্ক]
সরি, আরজ আলী মাতুব্বরের নামটি সাহিত্যিক হিসাবে নয়, কাণ্ডজ্ঞানমুখর একজন অনুকরণীয় দার্শনিকের হবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
নামটাকে উল্লেখিতের মাঝে দেখে অবাক হইছি।
[মন্তব্য-লিন্ক]
মাহবুব মোর্শেদের নামটি দেখে কেন অবাক হলেন, তা ব্যাখ্যাপূর্বক জানালে এর জবাব দেয়া যেত।
[মন্তব্য-লিন্ক]
লেখাটির আলোচনায় এসে বেশ সমস্যায়ই পড়তে হলো! মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যগুলোর প্রকরণ দেখে মূল লেখা বিশ্লেষণের আর ইচ্ছা রইল না। যদিও এধরণের জনবিচ্ছিন্ন সাহিত্যালোচনার কোন কার্যকারণ আছে বলেও দেখি না। যে সৃষ্টি নিজের এবং নিজের চারপাশের বিষয়বস্তু আর নিজের বা নিজেদের গোষ্ঠিগত গন্ডির ভেতরেই ঘুরপাক খেতে থাকে তার সাথে মানুষের জীবন-যাপনের কোন সম্পর্কই যখন দৃশ্যমান হয়না তা নিয়ে অর্থহীন তর্ক হতে পারে, কিন্তু সৃষ্টিশীল কিছু নৈব নৈব চ।
দৃষ্টি আকর্ষিত হলো “মুখোশ” আর “চুলকানি” শব্দ ব্যবহারে। এই শব্দ ব্যবহারে মোটেই জাত গেল বলে চিৎকার করছিনা কিন্তু। তবে ছদ্ম নাম ব্যবহার যদি চুলকানির উদ্রেগ করে এবং সেই চুলকানি যদি আর কোন কিছুতেই নিরাময় না হতে চায় তাহলে চুলকানির উৎসমূলে ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। যদ্দুর মনে পড়ে লেখক জাহেদ সরওয়ার অন্য একটি ব্লগে “মাশা” নামে লেখেন। যদি মাশা তাঁর ডাক নাম হয়ে থাকে তাহলে কিছু বলার নেই। আর যদি তা না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে তিনিও মুখোশে আবৃত, এবং তাঁরও ফাজলামো করার খায়েশ আছে (শাহেদ সাইফুল্লার বর্ণনা মতে) স্বীয় শরীরজাত চুলকানি থেকে পরিত্রাণ পাননি বলেই চুলকানি ছড়িয়ে দিতে ব্রতি হয়েছেন।
এবার লেখা প্রসঙ্গে আসা যাক। লেখাটির মূল থিম- “বাংলাদেশে ১৫ টি বই নেই যা বারে বারে পড়া যেতে পারে”, এর সাথে যোগ হয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য থেকে আরম্ভ করে হালের পত্রিকা সম্পাদককে দিগম্বর করা পর্যন্ত। এতবড় সাহিত্যসন্দর্ভ নিয়ে সুগভীর সাহিত্যালোচনা আমার কাছে অনেকটাই অযথা কালক্ষেপণ মনে হয়। শুধু দু’চারটি কথা বলব লেখকের ক্ষোভ-বিদ্রোহ-বিক্ষোভের মূলের সন্ধানে……….
আমার কাছে মনে হয়েছে আপনাকে কোনও না কোন ভাবে এদেশের সাহিত্যব্যাপারিরা বা সাহিত্যআড়ৎদাররা মূল্যায়ন করেননি। আপনার সুপ্ত প্রতিভাকে প্রভাবক সমেত বাইরে বেরিয়ে জনসমর্থন যোগাড়ের কাঙ্খিত ব্যবস্থা করে দেন নি। কোন ভাবেই তাঁরা আপনার বহুমুখি প্রতিভাকে আমলযোগ্য বলে মনে করেন নি, সেখানে থেকেই আগাপাশতলা অব্দি সবার বিরুদ্ধেই আপনার আরোপিত দ্রোহ “বিদ্রোহী” হয়ে উঠতে চেয়েছে। কার্যত কি দাড়িয়েঁছে সেটা বলার সময় এখনো আসেনি।
আপনাকে কিছু তথ্য দিইঃ
১। হুমায়ূন আজাদ যাকে আপনি জ্ঞানী বলে শ্রদ্ধা করতে গিয়ে অপরাপর সবাইকে হেয় করছেন (এটি হুমায়ূনেরও সহজাত প্রবৃত্তি ছিল) তাঁকে নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রথম যে রচনা ছাপা হয় সেটি সাপ্তাহিক বিচিত্রায়। ১৯৮৬ ডিসেম্বর বা ১৯৮৭র জানুয়ারীতে। সেটি ছিল তাঁর একক কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানের সংবাদ। তখন শামসুর রাহমান বিচিত্রার সম্পাদক (এবং ওই আসরের প্রধান অতিথি ছিলেন) তিনি(আজাদ) তাঁর কবিতা পাঠের অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রাহককে নোটস দিচ্ছিলেন। “বিখ্যাত কবি শামসুর রাহমান বলেন-আজাদ এর এই একক কবিতা……” এই শব্দটি তিনি ১৮ বার উচ্চারণ করায় এবং প্রতিনিধি তা লেখায় এটি সম্পাদনা হয়ে তিন বার এসেছিল। নিজের ঢোল এমন নগ্নভাবে পেটাতে দেখে সেই যে সংবাদ সংগ্রাহকের বিস্মিত হওয়া, তা আরো বেড়ে যায় যখন তারই সামনে হাসতে হাসতে তিনি তসলিমা সম্পর্কে কুৎসিত যৌনাত্মক মন্তব্য করেন, যখন মলত্যাগের ভঙ্গীতে সাপ্তাহিক ২০০০ এর প্রচ্ছদে পোজ দেন………….. তার পরও তিনি শুধুমাত্র তাঁর “ধর্মানুভূতির উপকথা”র জন্য আজো সেই সংবাদ সংগ্রাহকের কাছে নমস্য। বলা বাহুল্য এই অধম সেই সংবাদ সংগ্রাহক।
২। অধূনা নিজেদের মহাবিপ্লবী ঠাউরে কিছু কিছু নালায়েক আহমদ ছফা কে কোট করেন। প্রথাবিরোধী মেহনতি মানুষের সাহিত্যিক জ্ঞানে পুজো করেন। সেই ছফার একটি উক্তি শুনুনঃ ” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলায় একটি মাত্র উপন্যাস লিখিত হয়েছে যা বার বার পড়তে হবে। এই লেখাটি লেখার কথা ছিল এপার বাংলার কারো, কিন্তু কেউ তা পারলেন না, পারলেন ওপার বাংলার “দেবেশ রায়” (তিস্তা পারের বৃত্তান্ত)”। যদিও দেবেশ এর জন্ম এই বাংলার সিরাজগঞ্জে। এই অধম প্রশ্ন করেছিল-ছফা ভাই আপনি পারলেন না কেন? উত্তর ছিল- “ড্রইংরুমে বসে কৃষকের কথা ভাবা যায় বটে, তা দিয়ে মহৎ সাহিত্য রচনা করা যায়না”।
ঠিক তেমনি, আরবান নাগরিকরা সাহিত্য নিয়ে তুলো কপচানো করতে পারেন বটে, বিশ্বের দাঁতভাঙ্গা সাহিত্যিকের রেফারেন্স তুলে আনতে পারেন বটে, তা দিয়ে প্রকৃত সাহিত্যের অলিন্দে পৌঁছানো দূরের কথা, সদর দরজা অব্দিও যাওয়া যায়না, যে কোশেশ আপনি করে চলেছেন। শুভেচ্ছা জানবেন।
[মন্তব্য-লিন্ক]
প্রিয় মনজুরুল হক
যদিও এধরণের জনবিচ্ছিন্ন সাহিত্যালোচনার কোন কার্যকারণ আছে বলেও দেখি না
আপনার একথার উত্তর এবং প্রশ্ন
আপনি কি নিজেকে ‘জন’ ভাবেন না? তাহলে এটা জনবিচ্ছন্ন আলোচনা হল কেমন করে।
দৃষ্টি আকর্ষিত হলো “মুখোশ” আর “চুলকানি” শব্দ ব্যবহারে। এই শব্দ ব্যবহারে মোটেই জাত গেল বলে চিৎকার করছিনা কিন্তু। তবে ছদ্ম নাম ব্যবহার যদি চুলকানির উদ্রেগ করে এবং সেই চুলকানি যদি আর কোন কিছুতেই নিরাময় না হতে চায় তাহলে চুলকানির উৎসমূলে ফিরে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। যদ্দুর মনে পড়ে লেখক জাহেদ সরওয়ার অন্য একটি ব্লগে “মাশা” নামে লেখেন। যদি মাশা তাঁর ডাক নাম হয়ে থাকে তাহলে কিছু বলার নেই। আর যদি তা না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে তিনিও মুখোশে আবৃত, এবং তাঁরও ফাজলামো করার খায়েশ আছে (শাহেদ সাইফুল্লার বর্ণনা মতে) স্বীয় শরীরজাত চুলকানি থেকে পরিত্রাণ পাননি বলেই চুলকানি ছড়িয়ে দিতে ব্রতি হয়েছেন।
আপনার এই বাক্যসমূহ অর্থহীন। কারণ মাশা আমার ডাক নাম। এবং অইসব ব্লগ আসলেই ফাজলামো করবার জায়গা সিরিয়াস কিছু লিখবার নয়। তা অইসব ব্লগের পোষ্টগুলো পড়লেই বুঝা যায়।
আমার কাছে মনে হয়েছে আপনাকে কোনও না কোন ভাবে এদেশের সাহিত্যব্যাপারিরা বা সাহিত্যআড়ৎদাররা মূল্যায়ন করেননি। আপনার সুপ্ত প্রতিভাকে প্রভাবক সমেত বাইরে বেরিয়ে জনসমর্থন যোগাড়ের কাঙ্খিত ব্যবস্থা করে দেন নি। কোন ভাবেই তাঁরা আপনার বহুমুখি প্রতিভাকে আমলযোগ্য বলে মনে করেন নি, সেখানে থেকেই আগাপাশতলা অব্দি সবার বিরুদ্ধেই আপনার আরোপিত দ্রোহ “বিদ্রোহী” হয়ে উঠতে চেয়েছে। কার্যত কি দাড়িয়েঁছে সেটা বলার সময় এখনো আসেনি।
নিজেকে কখনো প্রতিভা বিকাশের জন্য কোনো সাহিত্যআড়ৎদারদের কাছে যেতে হয়নি কেননা অধমের কোনো প্রতিভা নাই। সুতারাং ফরাসী দার্শনিক পাণ্ডা আলাবাদিয়ুর ফ্রযেড পূণ ব্যখ্যা অনুযায়ী বলতে হয় উপরোক্ত বার্তা গুলো আপনার স্বমস্তিস্কপ্রসূত এবং স্বগতোক্তিমাত্র।
আর নীচের তথ্যগুলো দিয়ে আপনি শুধু আমার না বলব পুরা জাতির অজানা একটা অধ্যায়কে সবার চোখের সামনে তুলে ধরলেন। সমস্ত প্রশংসা আপনার প্রাপ্য।
ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।
[মন্তব্য-লিন্ক]
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীরের মন্তব্য অবলোকন
থাকি বিদেশে। জাহেদ সরওয়ারের মতে হতে চেয়েছিলাম লেখক বলা যায়। পৃথিবীর যেখানে থাকি সেখানে এই সময়ের লেখকদের বইপত্র খুব একটা পাই না বললে অত্তু্যক্তি হয় না। ফলে বাংলাব্লগ আর বাংলাপত্রিকার সাময়িকী দেখে যতটুকু আচ করা যায়।
জনাব কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের অনুকরণীয় মানুষ ও সফল সাহিত্যিকদের নাম বলতে গিয়ে যাদের নাম বলেছেন।
রাজনীতির ক্ষেত্রে
কর্নেল তাহের, সিরাজ শিকদার, তাজউদ্দীন আহমদ,বদরুদ্দীন উমর, টিপু বিশ্বাস
সাহিত্যের ক্ষেত্রে ইলিয়াস, সাইদ আতিকুল্লাহ (গল্প, কবিতা উভয় ক্ষেত্রে), আবুল হাসান, রুদ্র, শহিদুল জহির, মামুন হুসাইন, সেলিম মোরশেদ, মাসুদ খান, মজনু শাহ, মাহবুব মোর্শেদ, আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর, হুমায়ুন আজাদ, হরিপদ দত্ত, আনু মুহাম্মদ, সলিমুল্লাহ খান, ফারুক ওয়াসিফ, ইমতিয়ার শামীম, কাজল শাহনেওয়াজ।
রাজনীতিতে যাদের তিনি অনুকরণীয় চরিত্র বলছেন তাদের মাঝে বদরুদ্দীন উমরকে রাজনীতিক হিসাবে গননা করা যাবে কিনা সন্দেহ। তাকে তো আমরা মুলত কলাম লেখক হিসাবে জানি। আর বাকি যারা তাহের শিকদার তাজউদ্দীন। এরা তিনজনই অমানবিকভাবে হত হওয়ায় তিনজনকেই আমরা শ্রদ্ধা করি।
দেশ,কাল পেরিয়ে মহাকালীক হওয়ার মতন এদের কাজটা কি? তাহেরের মতো নির্বোধ অদূরদর্শী মানুষ। শিরাজ সিকদারের মতো রোমান্টিক বিপ্লবী, বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত না করে অথবা অপ্রস্তুত ক্ষেত্রে বিপ্লব করার স্বপ্ন দেখার মতো মানুষ কি করে অনুকরণীয় হতে পারে?
আর সাহিত্যের ক্ষেত্রে হাসান আজিজুল হক, আহমদ ছফা এদুজন কেন বাদ যাবে?
বরং মাসুদ খান-মজনু শাহ-মাহবুব মোর্শেদ, প্রথম আলো আর আজকের কাগজের টিকিটপ্রাপ্ত বলেইকি এদেরকে সাহিত্যিক হিসাবে অন্তভূক্ত করতে হবে? মিডিয়াবাজি ছাড়া এদের কাজটা কি?
আবুল হাসান-রুদ্র-জহির ভাললেখার আগেইতো শেষ হয়ে গেল। জহিরের সে রাতে পুর্ণিমা ছিল বইটা ছাড়া আরো কোনো বই পড়া যায়? মুখের দিকে দেখিতো পড়তেই পারিনি। যদিও বইটি পেতে অনেক কষ্ট্ পেতে হয়েছে।
মনজুরাউলের মন্তব্য অবলোকন
২। অধূনা নিজেদের মহাবিপ্লবী ঠাউরে কিছু কিছু নালায়েক আহমদ ছফা কে কোট করেন। প্রথাবিরোধী মেহনতি মানুষের সাহিত্যিক জ্ঞানে পুজো করেন। সেই ছফার একটি উক্তি শুনুনঃ ” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলায় একটি মাত্র উপন্যাস লিখিত হয়েছে যা বার বার পড়তে হবে। এই লেখাটি লেখার কথা ছিল এপার বাংলার কারো, কিন্তু কেউ তা পারলেন না, পারলেন ওপার বাংলার “দেবেশ রায়” (তিস্তা পারের বৃত্তান্ত)”। যদিও দেবেশ এর জন্ম এই বাংলার সিরাজগঞ্জে। এই অধম প্রশ্ন করেছিল-ছফা ভাই আপনি পারলেন না কেন? উত্তর ছিল- “ড্রইংরুমে বসে কৃষকের কথা ভাবা যায় বটে, তা দিয়ে মহৎ সাহিত্য রচনা করা যায়না”।
জাহেদ সরওয়ারের মুখোশ আর চুলকানি শব্দদুটি আপত্তিকর হলে ‘নালায়েক’ শব্দটি কেন মুক্তাঙ্গনের কাছে আপত্তিকর হবেনা?
এই ধরণের উক্তি করলে ছফা কেন মেহনতি মানুষের সাহিত্যিক হতে পারবেন না। এ লেখায় যে ধরণের সুরে মনজুরাউল কথা বলেছেন মনে হয় তা বয়স এবং জ্ঞান কোনদিক দিয়েই তিনি তার যোগ্য নন। আমরাকি আরও একটু সংযমী হবোনা?
আরবান নাগরিকরা সাহিত্য নিয়ে তুলো কপচানো করতে পারেন বটে, বিশ্বের দাঁতভাঙ্গা সাহিত্যিকের রেফারেন্স তুলে আনতে পারেন বটে, তা দিয়ে প্রকৃত সাহিত্যের অলিন্দে পৌঁছানো দূরের কথা, সদর দরজা অব্দিও যাওয়া যায়না, যে কোশেশ আপনি করে চলেছেন।
মন্তব্যকারের এই মন্তব্য শুনে মনে হচ্চে তিনি সাহিত্যের অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যত গিলে বদহজমে ভুগছেন। সাহিত্যেই একমাত্র বিষয় যা যে কোনো মানুষের দ্বার যে কোনো জায়গায় যে কোনো মুহুর্তে তৈরী হতে পারে। আরবান নাগরীকদের হাতেই পৃথীবির অধিকাংশ সাহিত্য তৈরী হয়েছে। সে কথা কি মন্তব্যকারীকে উদারহারন দিয়ে বুঝাতে হবে?
[মন্তব্য-লিন্ক]
কর্নেল তাহেরকে কেন আপনি নির্বোধ বললেন, এর কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। শহীদুল জহির, মাসুদ খান, মজনু শাহ, মাহবুব মোর্শেদ-এর ব্যাপারে শুধু মিডিয়াবাজ বললেই তাদের ব্যাপারে পরিপূর্ণ মন্তব্য হয়ে যায়? সাহিত্যিক হিসাবে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিস্তারিত জানালে আমি অন্তত উপকৃত হতাম। সাহিত্য সাময়িকীতে লিখলেই তিনি সাহিত্য জগৎ থেকে খারিজ হয়ে যান- এধরনের সি্দ্ধান্তের সাথে আমি একমত নই।
হাসান আজিজুল হক সাহিত্য-সংস্কৃতির জগতে অবশ্যই চমৎকার অবদান রেখেছেন। তবে আনন্দবাজার ও ফিলিপস পুরষ্কার গ্রহণ তার সামগ্রিক ব্যক্তিত্বকে বেশ ম্লান করেছে।
আহমদ ছফা আমাদের শিল্প-সাহিত্য জগতের অতি প্রয়োজনীয় নাম। তবে তার জীবনভাবনা কখনো কখনো ধর্মীয় ভাববাদে আচ্ছন্ন থাকত; মিলাদ মাহফিলে যেতেন বলেও জানা যায়। লিবিয়ার ধরনে ইসলামি সমাজতন্ত্র কায়েমের স্বপ্ন দ্বারাও মাঝে মাঝে তিনি বিমোহিত হতেন।
আমার উপরোক্ত মন্তব্য সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ পাল্টামত জানালে কৃতজ্ঞ থাকব।
[মন্তব্য-লিন্ক]
জনাব শাহেদ সাইফুল্লাহ।
মুক্তাঙ্গনে কি কি শব্দ ব্যবহার করা যাবে বা কি কি নিয়মে এখানে লেখা প্রকাশ করা যাবে তা একাউন্ট খোলার আগেই বোধকরি শাহেদ সাইফুল্লাহ মহোদয়ের জ্ঞাত আছে। আর যদি তা না থেকে থাকে তাহলে তাকে বিনীত ভাবে নিয়মকানুনগুলো আরো একবার পড়ে নিতে অনুরোধ করি। “ব্যকরণ”, “বুজোর্য়াদের ড্রইংরুম” কথাগুলি বলে কি কি বোঝাচ্ছেন পরিষ্কার হলো না। যদ্দুর অনুমান করতে পারি আপনি নিশ্চই বুজোর্য়াদের বেডরুম আশা করেননি?
এই যে আপনি রায়হানকে তিরষ্কার করলেন জাহেদ সরওয়ারের অবিশ্রুত কে বলার কারণে। ঠিক একই “দোষ”টি কি আপনি করলেন না? রায়হান, অবিশ্রুত, মনজুরাউল এরা কেউ তো আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি, করেছে লেখককে, (এবং সেটা ব্লগীয় পরিমন্ডলে স্বতসিদ্ধ) তাহলে আপনিই বা আগবেড়ে পায়ে পাড়া দিয়ে সেসব নিজের গায়ে টেনে নিলেন কেন? এটি যদি আপনার স্বভাব হয় তাহলে কিছু বলার নেই, আর যদি মনে করেন খোঁচাখুচি করে এক ধরণের পুলক লাভ করছেন, তাহলে বলব- ভুল পথে এগুচ্ছেন। পোস্ট কন্টেন্ট এর বাইরে গিয়ে বাহুল্য বাক্য বিনিময়ের স্টেজ আমরা সম্ভবত পার করে এসেছি। আর মুক্তাঙ্গন সে সবের জন্য খুব উপাদেয় যায়গা নয়।
আমাকে উদ্দেশ্য করে ৮ নং মন্তব্যে যা বলেছেন তার উত্তর দিতে গেলে আপনার অবস্থানে নেমে আমাকেও ঝগড়া বাধাতে হবে। সে পথে যাওয়াটা সমীচিন মনে করলাম না।
এই যে লাইনটি বলেছেন। আপনাকে মূল্যায়নের জন্য এটুকুই প্রনিধানযোগ্য। ভাল থাকবেন।
[মন্তব্য-লিন্ক]
@শাহেদ সাইফুল্লাহ (কিংবা যেই হউন আপনি)
@জাহেদ সরওয়ার
=১=
প্রথমেই শাহেদ সাইফুল্লাহকে অভিনন্দন জানাতে হচ্ছে ইন্টারনেটে জীবনের প্রথম মন্তব্যটি লিখবার জন্য, তাও প্রথম চেষ্টাতেই একেবারে বিশুদ্ধ বাংলা হরফে, তাও জাহেদ সরওয়ারেরই পোস্টে, জাহেদ সরওয়ারের মন্তব্যকেই সমর্থন জানাতে!! পুরো ইন্টারনেট ঘেঁটে “শাহেদ সাইফুল্লাহ” নামের অধীনে আর কোনো মন্তব্য, লেখা বা কোন ধরণের এন্ট্রিই খুঁজে পাওয়া গেল না (এখানে গুগলসার্চের ফলাফল)। সুতরাং ধরেই নিতে হচ্ছে এমন চোখা মন্তব্যকারী কোন বিশেষ প্রক্রিয়ায় ইন্টারনেটে সবার দৃষ্টি বাঁচিয়ে চলছিলেন এতদিন!
=২=
আর কেউ এই কাকতালীয় মিলটি লক্ষ্য করেছেন কি না জানি না, উপরে জাহেদ সরওয়ারের মন্তব্য এবং সেটির পক্ষ নিয়ে শাহেদ সাইফুল্লাহ’র মন্তব্য দুটোতেই একই ধরণের ফরম্যাটিংয়ের অভ্যাস স্পষ্ট (দুজনেরই ব্লক-কোট ব্যবহার “না করার” ধরণটি খেয়াল করুন)। আরও প্রমান ১, ২, ৩। আরও বেশ কয়েকটা সূত্র ছড়িয়ে আছে, সে আলোচনায় আর যাওয়ার দরকার নেই। এখানে কে যে ঠিক কার দ্বারা প্রভাবিত, বোঝা যাচ্ছে না, কিন্তু “কাকতালীয়” মিলগুলি চোখে পড়ার মত।
=৩=
মুক্তাঙ্গন ব্লগের একদম শুরু থেকে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে আসছি আমি। তাই ব্লগটি কোথায় আছে, কি নীতিতে চলে, এবং কোথায় যেতে পারে, তা নিয়ে আমার মতো অনেকেরই কিছু সাধারণ ধারনা আছে নিয়মিত পাঠক হিসেবে। সুতরাং, যত খুশী “বুর্জোয়া ড্রয়িংরুম” বলে গালি দেন, সে সব কেউ বিশ্বাস করবে না। আর মুক্তাঙ্গনের ভাষারীতি আর প্রথাগুলো আপনার কিংবা আমার কথায় পাল্টাবে না। সে চেষ্টা করেও লাভ নেই। এই রীতিগুলো মেনে নিয়ে লিখতে পারলে আমরা এখানে লিখবো, না হলে লিখবো না। তাতে বাঙালীর কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। ব্লগকে যারা “গণ শৌচাগারের” দেয়াল বানাতে বদ্ধপরিকর, আপনি বরং তাদের সাথেই থাকুন। আর বাংলা ভাষায় ঐ জাতীয় পরিবেশের ব্লগও খুব কম নেই। সেগুলোর কোন একটাই হয়তো আপনার জন্য আরও বেশী আরামদায়ক হবে। পাঠক হিসেবে রায়হান রশিদ যে জাহেদ সরওয়ারকে অত্যন্ত ভদ্রভাবে ভাষা বিষয়ে “সতর্ক হওয়ার অনুরোধ” করেছেন, সেটাকে পুরোপুরি সমর্থন করি। এর প্রয়োজন ছিল। কারণ, ইন্টারনেট ঘাটতে গিয়ে জানলাম, সম্প্রতি জাহেদ সরওয়ারকে সচলায়তন থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে ভাষা ব্যবহারে কুরুচির প্রমাণ রাখার জন্য। জাহেদ সরওয়ারের শিশু ধর্ষণকারী এক চলচ্চিত্র নির্মাতার পক্ষে সাফাই গাওয়া পোস্টকে কেন্দ্র করে সচলায়তনের সেই ঘটনা। জাহেদ এবং সচলায়তনের মধ্যে এই আদানপ্রদানটি লক্ষ্য করুন:
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, দ্বিতীয় সুযোগ সবারই প্রাপ্য (জাহেদেরও), যদি তারা নিজেদের শুধরে নেয়ার সুযোগগুলো ঠিকমতো কাজে লাগান। কিন্তু তেমনটা মনে হচ্ছে না এখানে।
=৪=
ফারুক ওয়াসিফকে জড়ানোর চেষ্টা করছেন কেন এখানে? আপনিই কি সেই ব্যক্তি না যিনি কিছুদিন আগে ফারুক ওয়াসিফের পোস্ট প্রথম পাতায় থাকা নিয়ে অভিযোগ করেছেন যে কারনে ব্লগ কর্তৃপক্ষ ফারুকের পোস্টটি সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়? সত্যিকারের বন্ধুর কাজ বটে! প্রমাণ: এখানে , এখানে।
=৫=
আপনাকে হতাশ করতে হচ্ছে। রায়হান রশিদ “অবিশ্রুত” না। অবিশ্রুত ছদ্মনামটি কার, তা আপনি না জানলেও ব্লগের অনেকেরই জানা আছে। অবিশ্রুতের লেখাগুলো ভালভাবে পড়ুন, বলা যায় না কিছু হয়তো শিখতেও পারবেন আপনি সেখান থেকে, বিশেষ করে বিরুদ্ধ মত এবং ব্যক্তিগত আক্রমনের জবাবও কিভাবে দিতে হয় (আপনাকেই দিয়েছেন)। আর কেবল “ফাজলামো” করার উদ্দেশ্যে আপনি (কিংবা আপনার সমমনারা) “ছদ্মনাম” বা “বিশ্বাসযোগ্য ভিন্ন নাম” যত খুশী ব্যবহার করতেই পারেন। তাতে ব্লগের বাস্তবতা পাল্টাবে না। কিছু দিন আগেও ছদ্মনামধারি এক বিশ্বখ্যাত ব্লগারের কোর্টকেস নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা হয়েছে। আপনার জানায় এবং বোঝায় এখনো অনেক ঘাটতি আছে। আমরা আগ্রহ নিয়ে মুক্তাঙ্গন পড়তে আসি। অনুরোধ : আমাদের সময় নষ্ট করবেন না। খুঁজলে আপনার “রুচিমাফিক” ব্লগ প্লাটফর্ম পেয়ে যাবেন অন্যত্র, সেটার গ্যারান্টি রয়েছে।
@ মুক্তাঙ্গন
@ মুক্তাঙ্গনের পাঠক
এই বিষয়গুলো উত্থাপন করলাম এই কারণে, এ জাতীয় বহু মন্তব্যকারী অতীতেও মাঝে মাঝেই গোল বাধাবার চেষ্টা করেছে, কিংবা মূল আলোচনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে। ব্লগের উদার মডারেশন নীতির সুযোগ নিয়েই সম্ভবত। মূল বক্তব্য বা আলোচনা নিয়ে এদের খুব কমই মাথাব্যাথা দেখা গেছে, অন্যের পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা ছাড়া। নিয়মিত পাঠক হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর। সুখের কথা হল, এই গোষ্ঠীটি কখনোই সুবিধা করতে পারেনি এখানে, এই ব্লগের নিজ পথে অটল থাকাই তার প্রমাণ। আরও একটি কারণে বিষয়গুলো উত্থাপন করা হল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সন্দেহও বলতে পারেন, জাহেদ সরওয়ার আর শাহেদ সাইফুল্লাহ একই ব্যক্তি। উপরে সেই ইঙ্গিতের সপক্ষে প্রমান দিয়েছি। নাম পাল্টালেও পরিচয় গোপন করা সহজ নয়। বিষয়টা তেমন গুরুত্বের না। কিন্তু এটা তখনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে যখন লেখক “মুখোশ” আর “ছদ্মনামের ব্যবহার” নিয়ে বাকি ব্লগারদের এক গাদা বক্তৃতা আর আক্রমন করে বেড়ান আর তা করার মাধ্যমে আলোচনার পরিবেশ নষ্ট করেন। আর যে লেখক শামসুর রাহমান এর মতো পরম শ্রদ্ধেয় লেখকের সমালোচনার নামে গালাগালি দিয়ে বেড়ান, তার নিজের গ্রহনযোগ্যতা এবং সততাও আমাদের ধর্তব্যে আনা দরকার (দেখুন – সচলায়তনের ক্ষেত্রে উদ্ধৃতি, বেনামে আক্রমনের প্রবণতা)। এই পোস্টের বক্তব্যের মান যাই হোক, পোস্ট লেখকের বাকি মন্তব্যকারিদের সাথে আলোচনা প্রত্যুত্তরের ঢং থেকে এটা পরিস্কার যে এই লেখকের টেমপেরামেন্টে সমস্যা আছে। ভিন্নমত দেখলেই এই লেখক মারমুখি হয়ে ওঠেন। পারসোনালি নিয়ে ফেলেন। এমন লেখকের কাছ থেকে আমি ভাল কিছুই আশা করিনা। ভবিষ্যতে লেখক এবং পোস্ট অনুমোদনের ক্ষেত্রে মুক্তাঙ্গন কর্তৃপক্ষের আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন মনে করি। এই ব্লগের পরিবেশ, মান এবং নিজের পথে চলার সংকল্পকে নস্যাত করতে আগ্রহী লোকের সংখ্যা কম হওয়ার কথা না।
[মন্তব্য-লিন্ক]
সৈকত আচার্য,
আপনার মূল্যবান মতামত এবং পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। সেই সাথে ব্লগের মডারেশন টিমের পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি এ ধরণের বিব্রতকর পরিস্থিতি নিরসনে আরও আগে কার্যকর প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণে আমাদের ব্যর্থতার জন্য।
মুক্তাঙ্গন কর্তৃপক্ষ
[মন্তব্য-লিন্ক]
@ জাহেদ সরওয়ার,
মুক্তাঙ্গনে আমরা (অর্থাৎ, এখানকার সব ব্লগার) সবাই মিলে সুনির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধ, কিছু ইস্যুর প্রতি কমিটমেন্ট এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে সিরিয়াস কাজের পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। এর সবটাতে যে আমরা সবসময় সফল হচ্ছি তা নয়, কিন্তু আমাদের দিক থেকে আন্তরিকতা এবং স্বচ্ছতায় কখনো কোন ঘাটতি ছিল না। সব ধরণের মালিকানা-স্বত্বের ধারণার বিপরীতে বাংলাদেশের এটিই সম্ভবত একমাত্র ব্লগ যেখানে ব্লগাররাই ওয়ার্কগ্রুপের অংশ হিসেবে এখানকার প্রতিটি নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, প্রতিটি নিয়ম প্রণয়ন এবং পরিবর্তন করেন, আর সে সবের বাস্তবায়ন করেন মনোনীত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। ব্যান হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি নিজেও এই ওয়ার্কগ্রুপেরই সদস্য ছিলেন।
ব্লগার সৈকত আচার্যের মন্তব্যের জবাবে তাঁর উত্থাপিত অভিযোগ কিংবা যুক্তিগুলোর একটিও যুক্তি দিয়ে খন্ডন করার পরিবর্তে প্রকাশের অযোগ্য ভাষায় ব্যক্তি আক্রমণমূলক যে প্রতি-মন্তব্যটি আপনি পেশ করেছেন, এবং তাতে যেভাবে আপনার কাল্পনিক ষড়যন্ত্র-তত্ত্বে মুক্তাঙ্গন এবং এর মডারেটরদেরও জড়ানোর চেষ্টা করেছেন (আপনার হাস্যকর অভিযোগ: ‘শাহেদ সাইফুল্লাহ’ চরিত্রটি নাকি মডারেটরদেরই তৈরী!!), তাতে আমরা বাধ্য হলাম বিরক্তির উদ্রেককারী আপনার এই প্রতি-মন্তব্যটি সরিয়ে নিতে। সেই সাথে মুক্তাঙ্গন মডারেটরগণ আপনার সার্বিক রেকর্ড পর্যালোচনা করে সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তেও একাত্ম হয়েছেন যে এ ধরণের সন্দেহবাতিকগ্রস্ত, যুক্তিজ্ঞানবিবর্জিত, বিনয়জ্ঞানরহিত, চিন্তায় দুর্বল, উগ্র-মস্তিষ্ক, কলহপ্রবণ এবং আত্মম্ভরী ব্লগারের কোন প্রয়োজন নেই মুক্তাঙ্গন এর। আপনাকে জানিয়ে রাখা দরকার – অত্যন্ত দুঃখের সাথে প্রথম বারের মতো কোনো ব্লগারের বিরুদ্ধে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হল আমাদের। মুক্তাঙ্গনের এই সমবায়ী কর্মযজ্ঞ আপনাকে ‘ধারণ’ করতে অক্ষম! আরও একটি কারণে আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হল। শুধু ব্লগ লেখা ছাড়াও বিভিন্ন প্লাটফর্ম এবং ফোরামে আরও গুরুত্বপূর্ণ সব প্রকল্পে সক্রিয় কর্মী এবং সংগঠক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন এখানকার বেশীর ভাগ লেখক। তাই, আপনার ব্যক্তিগত খেয়ালখুশীজাত দায়িত্বহীন আচরণের প্রতি মনযোগ দেয়া তাঁদের এবং মুক্তাঙ্গনের মূল্যবান সময়ের অপচয় বলে আমরা গণ্য করি।
সামহোয়ারইনে আপনার কুৎসা-পোস্টে আপনি অনেকগুলো অন্যায্য এবং মনগড়া অভিযোগ করেছেন। সবার জ্ঞাতার্থে সেগুলোর মধ্য থেকে মাত্র কয়েকটি তুলে ধরা হল:
১) মুক্তাঙ্গন এর এখনকার সাত জন মডারেটরের নির্বাচন-প্রক্রিয়ার ব্যাপারে আপনি নিজেও সম্পূর্ণরূপে অবগত, ওয়ার্কগ্রুপের একজন প্রাক্তন সদস্য হিসেবে। আপনার খুব ভাল করেই জানা আছে সেখানে সৈকত আচার্য মডারেটরদের একজন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন না। তারপরও আপনি কেন সৈকত আচার্যকে ‘মডারেটর’ (এবং তাঁর মন্তব্যকে মডারেটরদের মন্তব্য) বলে প্রচারের মাধ্যমে মিথ্যাচার করছেন, তা আমাদের বোধগম্য না।
২) আপনার কল্পনাপ্রসূত দাবী – ‘নির্মাণ লিটল ম্যাগাজিনের সাথে যারা জড়িত তারাই মুলত এটার মডারেটর’। জেনে রাখুন – মুক্তাঙ্গন এর সাত জন মডারেটরের মধ্যে মাত্র দু’জন সরাসরি ছোট পত্রিকা ‘নির্মাণ’ এর সাথে জড়িত। বাকী পাঁচ জন নির্মাণ পত্রিকার ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা কিংবা সম্পাদনা – কোনটির সাথেই জড়িত নন। নির্মাণের বিরুদ্ধে আপনার এই অসংযমী অন্যায্য বিষোদগার এই পাঁচ জনকেও বিব্রত করেছে। দয়া করে মিথ্যাচার বন্ধ করুন।
৩) মুক্তাঙ্গনে এ পর্যন্ত আপনার ১২ টি পোস্টের মান নিয়ে মডারেটরদের অনেকের মনেই সংশয় থাকলেও সেগুলো শেষ পর্যন্ত ঠিকই প্রকাশিত হয়েছে। মন্তব্য এসেছে ৬০ এর অধিক, আপনি নিজেও মন্তব্য করেছেন ২৫টির মতো। তাই, কোন এক পোস্টে ভিন্ন/বিরুদ্ধ মতের সম্মূখীন হলেই ব্লগের মধ্যে ফ্যাসিজম খোঁজা সুস্থ মস্তিষ্কের লক্ষণ নয়। আর ব্লগার ‘অবিশ্রুত’ও ইতিপূর্বে আপনাকে অন্যান্য পোস্টে মন্তব্য দিয়েছেন, বরাবরকার মতো ছদ্মনামেই দিয়েছেন। তখন আপনার মধ্যে কোন আপত্তি লক্ষ্য করিনি আমরা। কারণ সেসব মন্তব্যে সরাসরি প্রশংসা না থাকলেও কোন ধরণের কঠিন প্রশ্ন করা হয়নি আপনাকে যেগুলোর উত্তর দিতে আপনি অপারগ। তাই হঠাৎ এক পোস্টে অবিশ্রুত’র কাছ থেকে সমালোচনাধর্মী (যা অত্যন্ত যৌক্তিক) মতামত পেয়েই রাতারাতি সব ধরণের ছদ্মনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করাটা যে এক ধরণের ভন্ডামী, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি এমনকি আপনারও আছে বলে আমাদের বিশ্বাস। এ থেকে আপনার স্তুতিপ্রিয় মানসিকতারও পরিচয় মেলে কিছুটা। বলা কঠিন, দুর্বল বক্তব্যের এই পোস্টটির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্নোত্তর এড়াতেই হয়তো আপনি লাইন ধরে এখানকার মন্তব্যকারী প্রত্যেক ব্লগারকে ব্যক্তিগত আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। অবশ্য সচলায়তন আপনাকে যে কারণে বের করে দিতে বাধ্য হয়েছে, সেই ঘটনার আলোকে আপনার আচরণে তেমন অবাক হওয়ারও হয়তো কিছু নেই। লক্ষণগুলো অপরিচিত নয়।
সামহোয়ারইনের আপনার পোস্টে উত্থাপিত উগ্র-মস্তিষ্কের বাকী অভিযোগগুলোর কোন জবাব দেয়ারই প্রয়োজন নেই। আপনার বোঝা, না বোঝা, বিষোদগার কিংবা মিথ্যাচার কোনোটাতেই মুক্তাঙ্গন ব্লগের গতিপথ পাল্টাবে না। সৈকত আচার্যের মন্তব্যের জবাবে আপনার প্রকাশ-অযোগ্য প্রত্যুত্তর এবং সামহোয়ারইন ব্লগে আপনার মনযোগ আকর্ষণেচ্ছু প্রচারণা আমাদের সিদ্ধান্তের সঠিকতাই আবারও প্রমাণ করলো। অত্যন্ত আপত্তিকর ভাষায় লেখা আপনার মন্তব্যটি আমাদের রেকর্ডে সংরক্ষিত রাখা হল বাকী সব প্রাসঙ্গিক তথ্যসহ।
ধন্যবাদ।
মুক্তাঙ্গন কর্তৃপক্ষ
[মন্তব্য-লিন্ক]
জাহেদ সরওয়ার ব্যাপারে মুক্তাঙ্গনের অনেক বিষয়ের সাথেই ঐক্যমত পোষণ করা যায়। তবে নিম্নোক্ত মতামত বা সি্দ্ধান্ত সম্পর্কে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি।
আমার মতামত সম্পর্কে জাহেদ সরওয়ার আমাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করেছেন বলে আমার মনে হয়নি।
আচ্ছা, এখন যদি জাহেদ সরওয়ার মুক্তাঙ্গনের সি্দ্ধান্তের বিষয়ে আপিল করতে চান, তাহলে কোথায় করবেন? তিনি যদি মনে করেন, এই ব্যাপারে তিনি মুক্তাঙ্গনের সাথেও মতবিনিময় করবেন, তাহলে তার ব্যাপারে কী করা হবে?
মুক্তাঙ্গন আমার অত্যন্ত প্রিয় এক ব্লগ, এখানে গণতন্ত্রের সর্বময় প্রয়োগ হবে, এটাই আমার প্রত্যাশা।
আরও একটা বিষয়, মুক্তাঙ্গন কি মানভাষা ও ব্যাকরণের প্রয়োগের ব্যাপারে একেবারে সুর্নিদিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছ? তাহলে গত ৮-১০-০৮ তারিখে মাসুদ করিম কী করে নিম্নোক্ত প্রত্যাশা করলেন? এ ব্যাপারে মুক্তাঙ্গনের মন্তব্য কী?
এই পোস্টেই ৭.১১.০৯ তারিখে মাহবুব মোর্শেদ সম্পর্কে সবাক কী করে লিখলেন?
ভাষা তার নিজস্ব প্রবহমানতার জোরেই নিজেকে ক্রমাগত বদলাতে থাকবে। এতে কারও হাত থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আর মানভাষা আর ব্যাকরণ তো সৃষ্টিকর্তার প্রেরিত কোনো ওহি নয় যে, একে বদলানো যাবে না।
সামহোয়ারইন-এ নির্মাণ বিষয়ে জাহেদ সারওয়ারেরর লেখাটি পড়লাম। নির্মাণকে যেভাবে উপস্থাপন করা হলো, এখানকার লিখিয়ে বা সম্পাদককে আমার অন্তত এমন বাজে কখনও মনে হয়নি। তবে এই ব্লগটিতে রিসেন্টলি পোস্ট লিখে বা মন্তব্য করা কিংবা কোনো কোনো লেখা পাঠ করে আমার মনে হয়েছে তাদের অনেকে একধরনের রুচিবোধ বজায় রাখতে চায়। তবে আমার মনে হয়, মুক্তমন আর মুক্তরুচির চর্চার মাধ্যমে মুক্তাংগন একসময় সমন্বয়বাদী প্রগতিশীলতার স্বাক্ষর রাখবে।
[মন্তব্য-লিন্ক]
কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর
মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনার উত্থাপিত মূল প্রসঙ্গগুলো সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করছি :
১
আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ না করলেও জাহেদ সরওয়ার যে অন্যদের সমালোচনামূলক প্রত্যুত্তরে অশালীনতা ও অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন এবং ভিন্ন ব্লগে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ‘মুক্তাঙ্গন’-এর কুৎসা রটিয়েছেন, তার প্রেক্ষিতেই তো মুক্তাঙ্গন’-কর্তৃপক্ষ কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা মনে করি মন্তব্যগুলো এবং কুৎসা-পোস্টগুলো ভালভাবে পড়লে বিষয়টা বুঝতে কারোরই অসুবিধা হওয়ার কথা না। আমরা এও মনে করি, ‘আমাকে তো ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়নি’ জাতীয় বোধ অভিযুক্ত কারও সার্বিক আচরণ (যার ভিত্তিতে আমাদের সিদ্ধান্ত) বিচারের মাপকাঠি হতে পারে না।
২
‘মুক্তাঙ্গন’ মানবাধিকারবিষয়ক কোনো আদালত নয় যে এখানে আপিল-শুনানির ব্যবস্থা রাখা দরকার। বৎসরাধিক কাল ধ’রে বহু লেখকের বিচিত্র ধরনের লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর হঠাৎ জাহেদ সরওয়ারকেই বা কেন নিষিদ্ধ করা হল, তার কারণ সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখিত হয়েছে। আপিল-শুনানির মাধ্যমে বিষয়টি নতুন কলেবরে কুতর্কেরই বিস্তার ঘটাতে পারে, যাতে জড়িত হওয়ার মতো অতিরিক্ত সময় ‘মুক্তাঙ্গন’-এর নেই। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, জাহেদ সরওয়ারকে আগেও বেশ কয়েকবার সাবধান করার চেষ্টা করা হয়েছে ব্লগের পক্ষ থেকে যখনই লক্ষ্য করা গেছে এই লেখকের আচরণে এবং লেখায় অসংযমজনিত শ্লেষাত্মক/ব্যক্তি আক্রমণ আর উইট-এর সীমানাগুলো স্পষ্ট নয়। আগেও বেশ কয়েকবার এই লেখক কোন যুক্তি সংগত কারণ ছাড়া ব্লগের বাকীদের বিরক্ত করার চেষ্টা করেছেন (লেখকের প্রতি ‘মুক্তাঙ্গন’ এর আগের মন্তব্যগুলো পড়ুন)।
সাম্প্রতিক যে পোস্টটি নিয়ে এই বিতর্ক, সে পোস্টে ভাষার প্রয়োগে রুচিহীনতার ছাপ স্পষ্ট। আমরা লক্ষ্য করেছি বাহ্যকর্মের ব্যাপারে এই লেখকের এক ধরণের অবসেশন রয়েছে (যা তিনি লেখনীতেও প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন)। এ সংক্রান্ত রেফারেন্সগুলো প্রতিবারই মডারেটরদের এডিট করে পোস্ট ছাপাতে হয়েছে। সচলায়তনে দেয়া লেখকের উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করার পর আপনার কেন কারোরই তো এ বিষয়ে কোন সংশয় থাকার কথা না! আর আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তো এখানকার সব লেখক-পাঠকেরই রয়েছে। মুক্তাঙ্গন এর মন্তব্য ঘরে অংশগ্রহণের নীতিমালা অনুসরণ করে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন, এমন কারও মন্তব্য তো এই ব্লগ আজ পর্যন্ত ডিলিট করেনি! এখানকার সব লেখক পাঠকই এই নিয়ম মেনে নিয়েই লেখেন। জাহেদ সরওয়ার কেন কেউই ততটা গুরুত্বপূর্ণ নন যে তার/তাদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে।
৩

আরেকটি বিষয় আপনাকে জানিয়ে রাখা দরকার। সামহোয়ারইনে জাহেদ সরওয়ার এর প্রথম এবং দ্বিতীয় কুৎসা পোস্টে বহু মন্তব্যকারী (যাঁদের কেউই মুক্তাঙ্গনের লেখক নন) তার কুৎসার সাথে একমত না হয়ে বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন। যেমন: ব্লগার অরণ্যদেব লিখেছেন “এক ব্লগের বদনাম আর এক ব্লগে করার জন্য কষে মাইনাস”; আরেক ব্লগার জাহেদ সরওয়ারের কুৎসা পোস্টের পুরো বক্তব্য এবং আচরণকে “গ্রাম্য” এবং “হীনমন্যতাপূর্ন” বলে সমালোচনা করেছেন। প্রমাণ হিসেবে দ্বিতীয় কুৎসা পোস্টের এই মন্তব্যটির স্ক্রিনশটও দেখুন (এখানে কিন্তু কোন ব্যক্তি আক্রমণ নেই), যেটি জাহেদ মুছে দিয়েছেন:
লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হল, অত্যন্ত কাপুরুষোচিতভাবে এধরণের মন্তব্যগুলোর (এই তিনটির বাইরেও আরও নিশ্চয়ই ছিল) সবগুলোই তার পোস্ট থেকে মুছে দিয়েছেন জাহেদ। এ থেকে আশা করি এই লেখকের সততার মান (integrity) আর সংস্কৃতির ব্যাপারে কারও বুঝতে বাকী থাকে না। এসব কারণেই ঠিক কার মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার জন্য উতলা হয়ে উঠছি আমরা, সে বিষয়েও আত্ম-অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে।
৪
গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষত বাংলা ব্লগে প্রায়ই এক ধরণের অযৌক্তিক প্রত্যাশা লক্ষ্য করি আমরা। এই বিষয়গুলো নিয়ে বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে লেখালিখি কম হয়নি। “যুক্তি সংগত নিয়ন্ত্রণ”, “Harm Principle”, “Slippery Slope”, “Defamation” ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। এই বিষয়ে নতুন কিছু যুক্ত করার নেই আমাদের। তবে আপনি জেনে আশ্বস্ত হবেন, এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমরা পুরোপুরি সচেতন এবং প্রতিনিয়ত সংগ্রামে রত। এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও জানতে Stanford Encyclopedia of Philosophy থেকে প্রাসঙ্গিক এন্ট্রিটি এবং জন স্টুয়ার্ট মিলের টেক্সটটি পড়ে নিলে উপকৃত হতে পারেন। তবে আমরা একথাও মানি – চিন্তাজগতের কোন কথাই শেষ কথা নয়। সেই বিবেচনায়, আপনার যদি দর্শন শাস্ত্র, নীতিশাস্ত্র এবং রাজনীতিবিজ্ঞানের এই বিশেষ শাখায় এখনো “অনাবিষ্কৃত কোন অধ্যায়” তুলে ধরার কিংবা “নতুন কিছু” যুক্ত করার থাকে, তবে নিঃসন্দেহে সবাই তা পড়তে আগ্রহী হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। পরামর্শ দেবো দর্শনশাস্ত্রের গভীরের সেই আলোচনা একটি ভিন্ন পোস্টের মাধ্যমে করার। আপনার সেই নিবন্ধের অপেক্ষায় থাকলাম আমরা।
“সবার জন্য প্লাটফর্ম” এর ধারণাটাই অলীক। তেমনটা বাস্তবে সম্ভব না, আর করলেও তার ফলাফল ভাল হয়েছে কোথাও বলে জানা নেই আমাদের। এই ব্লগ চালু রাখার পেছনে বহু মানুষের শ্রম, মেধা, নিষ্ঠা এবং অবদান রয়েছে। সুনির্দিষ্ট কিছু চিন্তা এবং লক্ষ্যে একাত্মতারই প্রতিফলন ঘটেছে পুরো প্লাটফর্মে। তাই, এই প্লাটফর্ম ‘সব লেখক’ কিংবা ‘সব পাঠকের’ প্রয়োজনকে (বা রুচিকে) মাথায় রেখে চালানো হচ্ছে না, সেটা সম্ভবও না। ঠিক কি ধরণের লেখক এবং পাঠক আমরা এখানে চাই সেটা নির্ধারণের পূর্ণ অধিকার আমরা (এবং এখানকার ব্লগাররা) সংরক্ষণ করি, অত্যন্ত যুক্তিসংগতভাবেই। আপনিও নিশ্চয়ই একথা মানবেন। ব্লগে নিবন্ধন করার সময় লেখকরা কিছু নীতিমালা (যেটি লেখকদেরই তৈরী) মানতে সম্মত হয়েই সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় এখানে আসেন; কেউ তাদের বাধ্য করে না। সেই প্রতিজ্ঞার কথাই জাহেদ সরওয়ারের মতো নিবন্ধিতদের মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দিতে হয় মডারেটরদের। আশা করি এর মধ্যে আপনি ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ খুঁজে পাচ্ছেন না।
৫
এ-বিষয়ে ‘মুক্তাঙ্গন’-এর সিদ্ধান্ত ‘সম্পাদনা ও মডারেশন’ শীর্ষক সাধারণ নীতিমালায় (৬-সংখ্যক ধারা) বর্ণিত আছে, যে-নীতিমালায় প্রথমত জেনে-শুনে সম্মত হয়েই একজন ব্লগারকে নিবন্ধিত হতে হয়। এছাড়াও মন্তব্য ঘরের ওপরেই এই বিষয়ে নিয়মগুলো আবারও মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। ‘প্রচলিত প্রমিত বাংলা’র প্রতি মুক্তাঙ্গন’-এর পক্ষপাত রয়েছে; ভাষা বা ব্যাকরণ এমন নয় যে রাতারাতি তার খোলনলচে পাল্টে দেওয়া যায়, তবে বানান সম্পর্কে সংক্ষেপে এটুকু বলব : বিকল্প বানানের ক্ষেত্রে একাধিক রূপ গ্রহণযোগ্য (অবশ্যই একই লেখায় একাধিক রূপ নয়) এবং বিকৃত, বর্জিত ও প্রাচীন বানান পরিহার্য। বিষয়টি অনিঃশেষভাবে বিতর্কবিস্তারী — ‘লেখার ভাষা : মুখের ভাষা’ নামক একটি বিতর্ক চলমান আছে আর্টস-এর পাতায়, ‘মুক্তাঙ্গন’-এও সে-বিতর্ক শুরু হওয়া সমীচীন মনে করি না। বিতর্ক করার মতো এমুহুর্তে আমাদের হাতে আরও জরুরী সব জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু পড়ে রয়েছে।
৬
মাসুদ করিমের একটি লেখার সূত্রে আপনি যা বলেছেন, তা কি ঠিক? তিনি নোয়াখালীর আঞ্চলিক শব্দ নিয়ে লিখেছেন, আঞ্চলিক ভাষায় নয়। মাহতাব নাঈম এর মেজবান নিয়ে পোস্টেও এমন আরও কিছু শব্দ উঠে এসেছে। এ-যাবৎ আঞ্চলিক ভাষায় লেখা কোনো পোস্ট ‘মুক্তাঙ্গন’-এ প্রকাশিত হয়নি।
৭
‘সবাক’-এর সংক্ষিপ্ত মন্তব্যটির কথা আপনি ঠিক কি কারণে উল্লেখ করলেন সেটা আমাদের বোধগম্য হলো না। মন্তব্যটিতে অন্তত কোন ব্যক্তিগত আক্রমণ তো আমাদের চোখে পড়ছে না। আপনারও তো তেমনটা ভেবে নেয়ার কথা না, কারণ, ব্যক্তি আক্রমণ আসলে কাকে বলে তার উদাহরণ তো আপনার জাহেদ সরওয়ারের পোস্ট, মন্তব্য এবং কুৎসা-পোস্টেই পাওয়ার কথা। ‘সবাক’ এর মন্তব্যটির অন্তর্নিহিত বক্তব্যও কখন কিভাবে ব্যক্তি আক্রমণ হয়ে উঠতে পারে, সেটি আপনার কাছে আরও স্পষ্ট হবে আপনি যদি সামহোয়ারইন-এ গিয়ে আপনার বক্তব্য নিয়ে এই দু’টো রম্য পোস্ট পড়ে দেখেন (এখানে এবং এখানে)। বলাই বাহুল্য, এই পোস্ট দু’টির মতো পোস্ট কিংবা এ ধরণের ব্যক্তি আক্রমণমূলক বা মানুষের প্রতি অশ্রদ্ধাপূর্ণ বক্তব্য যাতে ছাপানো না হয়, মুক্তাঙ্গন ব্লগের মডারেটররা সেই চেষ্টাটাই নিরলসভাবে করে থাকেন। মুক্তাঙ্গনের যে পরিচ্ছন্ন কাজের পরিবেশ আপনি দেখছেন এখন, তা এই পদক্ষেপগুলোর এবং অবস্থানের ফলাফল মাত্র। “সীমাহীন মত প্রকাশের স্বাধীনতার” মতো অবাস্তব কোন মানদন্ডকে উপজীব্য করে আমরাও যদি এ জাতীয় পোস্ট মুক্তাঙ্গনে ছাপানো শুরু করতাম, সেটা আপনি কিভাবে নিতেন? এখানকার অন্য ব্লগার কিংবা পাঠকরাই বা সেটা কিভাবে নেবেন বলে আপনার মনে হয়?
৮
মুক্তবুদ্ধির চর্চা অবশ্য কাম্য, কিন্তু ‘মুক্তরুচির চর্চা’কে উৎসাহিত করা হলে ‘মুক্তাঙ্গন’ কি তার স্বাতন্ত্র্য ও সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারবে? ব্যক্তিমানুষের রুচির রকমফের আছে, কিন্তু এসব রুচির বিচিত্র প্রদর্শনী শুরু হলে মুক্তালোচনার কাঙ্ক্ষিত পরিবেশই কি বিনষ্ট হবে না?
‘মুক্তাঙ্গন’ মুক্তালোচনারই বিশ্বস্ত অঙ্গন হয়ে উঠতে চায়, কলহ-কুতর্কের নয়। এই সমবায়ী সারস্বত ক্ষেত্রে আপনাকে নিয়মিত সহযাত্রী হিসেবে পাব, আশা করি।
[মন্তব্য-লিন্ক]
ধন্যবাদ, ধন্যবাদ এবং ধন্যবাদ।
তবে এক্ষেত্রে শুধু একটাই ভিন্নমত, সবাক-এর মন্তব্যকে প্রমিত ভাষার বদলে এলোমেলো ধরনের আঞ্চলিক ভাষায় শ্লেষাত্মক ধরনের বক্তব্যের কথাই শুধু আমি জানিয়েছিলাম। এখানে তো আপনাদের পছন্দের মানভাষার প্রয়োগ হয়নি। আমি শুধু তা-ই স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম। সবাক-এর মন্তব্যকে আমি ব্যক্তি-আক্রমণ বুঝাতে চাইনি।